
আজ আমার বাড়িতে আমার খুব খুব প্রিয় কয়েকজনের আসার কথা | কথা হয়েছে সব্বাই একসঙ্গে জমিয়ে লাঞ্চ করবো | যারা আসছে , তাদের ইচ্ছা , আমি যেন লাঞ্চে মাছের কোনো টেস্টি টেস্টি মেনু রাঁধি | আমার হাতের রান্না , মাছের যে কোনো মেনু |

ভাবছি , ভাবছি , কি রাঁধবো ? কি রাঁধবো ? যা সবারই ভালো ও লাগবে , আর একটু টেস্টি টেস্টি ও হবে | আবার একটু অন্য রকম ও হবে | ভাবতে ভাবতে খেয়াল হলো , ফ্রিজে দুটো নারকেলের দুধের প্যাকেট কালকেই কিনে এনে রেখেছি | ভেবেছিলাম চিকেন মালাইকারি রাঁধবো | কিন্তু সবার ইচ্ছে মাছের মেনু হবে | তাই ভাবলাম যদি কাতলা - মালাকারী রাঁধি , তবে তো অন্য রকম হবেই আর খানিকটা নতুনত্ব ও থাকবে |
মাছের কোনো মেনু হবে বলেই , সকালে প্রায় ১কিলো ৬০০ - ৭০০ গ্রামের মতো , খুব ফ্রেশ কাটা কাতলা , অলরেডি রান্নাঘরে এসে পৌঁছে গেছে | মনে হলো , ভালোই ভেবেছি | খুব খুব কম রান্না হওয়া একটা মাছের পদ | ভেবেই নিলাম কাতলা - মালাইকারি , অবশ্যই টেস্টি টেস্টি করবো আর খাবার টেবিল জমিয়েও দেবো |
ভাবাভাবি শেষ হয়ে যেতেই , রান্নাঘরে ঢুকে , কাটা কাতলা মাছের টুকরোগুলি ভালো করে ধুয়ে , নুন আর সর্ষের তেল মাখিয়ে , ঢাকা চাপা দিয়ে রেখে , খানিকক্ষন ম্যারিনেট হতে দিলাম | সব কাজ সেরে যখন রান্না শুরু করবো , প্রথম মেনু টাই রাঁধবো ,'' কাতলা - মালাইকারী '' (Katla - Malaikari) |
উপকরণ :-

কাতলা মাছ - ১কিলো ৬০০ - ৭০০ গ্রামের মতো , টুকরো টুকরো করে কাটা , ভালো করে ধুয়ে নুন আর সর্ষের তেল মাখিয়ে রাখা
টমেটো - ১টা বড়ো সাইজের , ছোট ছোট টুকরো করে কুচিয়ে রাখা
পেঁয়াজ - ছোট ছোট ৩টে , মিহি করে কুচিয়ে রাখা
রসুন - খুব ছোট একটা , কোয়াগুলো ছাড়িয়ে রাখা
আদা - ইঞ্চি দেড়েক , খোসা ছাড়িয়ে , টুকরো টুকরো করে কেটে রাখা
কাঁচালঙ্কা - ৮-৯টা , ২-১টা বেটে দেবো , বাকি গুলো , টেস্ট বাড়াতে গোটা গোটা রান্নায় ছেড়ে দেবো

কিশমিশ - ৪০-৫০ গ্রামের মতো
ছোট এলাচ - ৮- ৯টা , একটু করে ফাটানো
লবঙ্গ - ৮-৯টা
দারচিনি - অল্প খানিকটা , টুকরো টুকরো করে রাখা
নারকেলের দুধ - ২ প্যাকেট
লাল লংকার গুঁড়ো - অল্প , নিজের নিজের পছন্দমতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো , অবশ্য - অবশ্যই লাগবে
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি আজ সব কাজ সেরে ফেলে , রান্নাঘরে দুপুরের রান্না করতে আবার এসে পৌঁছে গেছি | ঠিক তো করেই রেখেছি , প্রথমেই রাঁধবো কাতলা - মালাইকারি | মিক্সিতে জলে ধুয়ে ধুয়ে একে একে নিয়ে নিলাম , আদা কুচিগুলো , রসুনকোয়াগুলো আর ২- ৩টে গোটা কাঁচালঙ্কা | মিহি করে বেটে রাখলাম | নারকেল দুধের প্যাকেট থেকে , দুধ একটা পাত্রে ঢেলে নিলাম |
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে উঠলেই আঁচ কমিয়ে কড়াইতে পর পর ছেড়ে দিলাম , ছোট এলাচগুলো , লবঙ্গগুলো আর দারচিনির টুকরো গুলো | সুন্দর গন্ধ !! আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম পেঁয়াজের টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজকুঁচিগুলো নাড়তে লাগলাম | পেঁয়াজকুঁচিতে হালকা বাদামি রং ধরে আসতেই , কড়াইতে দিলাম , আদা , রসুন আর কাঁচালংকার পেস্ট টা | আবার শুরু করলাম , আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সব কিছুর নাড়াচাড়া |

দিয়ে দিলাম , টমেটোর টুকরোগুলো | চললো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়াচাড়া | মশলা কষার খুব সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে , কষা প্রায় হয়েই এসেছে ! আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম প্রয়োজনমতো অল্প নুন , চিনি আর কিসমিস গুলো | একটু নেড়ে নিয়ে , কড়াইতে মশলা কষার মধ্যে একে একে বসিয়ে দিলাম , ম্যারিনেট করে রাখা মাছের টুকরোগুলো | আর ছড়িয়ে দিলাম অল্প লাল লংকার গুঁড়ো | আঁচ বাড়িয়ে একটু ক্ষণ ভালোমতো গরম হতে দিলাম | তারপরই কড়াইতে মাছের মধ্যে ঢেলে দিলাম , নারকেলের দুধটা |

খুন্তি দিয়ে খুব হালকা হাতে রান্না একটু নেড়েচেড়ে দিলাম | বেশি আঁচে রান্না এখন টগবগ - টগবগ করে ফুটছে | আর সঙ্গে সঙ্গে সুন্দর গন্ধে চারিদিক একেবারে মো মো ....মো মো করছে | আঁচ কমিয়ে , হালকাভাবে একটা ঢাকা দিয়ে মাছগুলো নারকেলের দুধে খানিকক্ষন মজতে দিলাম | মাঝে মাঝে ঢাকা সরিয়ে সরিয়ে রান্নাটা দেখেও নিচ্ছিলাম |

এবার মনে হচ্ছে রান্না হয়ে এসেছে | ঠিকঠাক সব কিছু হয়েছে কিনা দেখার জন্য , রান্না অল্প চেখে নিলাম | বাঃ ! বাঃ ! সব তো দেখছি , এক্কেবারে ঠিকঠাক !!রান্নার স্বাদ বেশ অপূর্ব ! অপূর্ব ও ও ও !......লাগছে | আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে নিয়ে , গ্যাস বন্ধ করলাম | তৈরি আমার টেস্টি টেস্টি ''কাতলা - মালাইকারী '' (Katla - Malaikari) | রান্না কড়াই থেকে একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম | তবে কাতলা - মালাইকারির সুন্দর মো মো করা গন্ধ , কিন্তু চারিদিকে ছড়িয়েই রইলো | সুন্দর এক লোভনীয় গন্ধ !!!

মধ্যাহ্ন ভোজের টেবিলে , কাতলা - মালাইকারী আমার প্রিয় মানুষগুলোকে যে কি ভীষণ খুশিতে আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছিলো , সেই অনুভূতিটা কিন্তু , ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না | সব্বার .সব্বার চোখে মুখেই তৃপ্তির এক সুন্দর আভাস | বার বার সবার মুখে রান্নার অনেক প্রশংসা ! অনেক অনেক প্রশংসা | প্রশংসা শুনে তো ভালো লাগলোই ....তবে, .... কিন্তু , আমার সবচাইতে ভালোলাগা , তাদের পাওয়া এই অনেক অনেক তৃপ্তি , অনেক অনেক খুশি আর অনেক অনেক আনন্দে !!!
সব্বাই ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন |
Comments