অঝোরে বৃষ্টি ! চারিদিকে ঝম ঝম করে বৃষ্টির শব্দ। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমের জানলায় এসে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি পড়েই চলেছে ,পড়েই চলেছে। বাড়ির সামনে ,রাস্তার উল্টোদিকের ছোট পার্কটা কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া ,কিছু স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না। খুব ভালো লাগছে। কেমন যেন একটু শীত শীত ভাব। বৃষ্টির অল্প স্বল্প ছিটকে আসা জলকণা গায়ে লাগছে। মনে হচ্ছে ছুট্টে গিয়ে জলে ভিজি। এখন বর্ষাকাল। এই বর্ষাকালই কবি মন নানা কবিতায় ভরিয়ে দেয়। শিল্পীর তুলি নানা রঙের আঁকিবুঁকিতে রাঙিয়ে তোলে। আর নানা সংগীত ভরে ওঠে ,বর্ষার নানা রাগ - রাগিণীর ঝংকারে।
হঠাৎ রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি ,এক বয়স্ক সবজিওয়ালা সবজি ভর্তি ঠেলা খুব কষ্টেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বার বার চোখ মুখ প্রবল বৃষ্টিতে ভরে যাচ্ছে। তাই ঠেলা টানতে বেশ বেগ পেতেই হচ্ছে। কি জানি কোথায় যাচ্ছে ? এখনো হয়তো কিছুই বিক্রি করতে পারেনি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমরা তো ছাদের তলায় থেকে বৃষ্টি উপভোগ করছি। কিন্তু যাদের রোজকার রুজিরুটি , বসবাস রাস্তায় ,তাদের কত কষ্ট। বিচিত্র আমাদের মন। অসহ্য গরমে মনে মনে ভাবি ,কখন এক পশলা বৃষ্টি হবে ......আবার প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া গ্রাম গঞ্জ,মানুষের হাহাকারে দু -চোখে জল আটকাতে পারি না।
একি ? চারদিকে মনে হচ্ছে অনেক গুলো গলার আওয়াজ।...... এতক্ষন ধরে জানলায় দাঁড়িয়ে কি দেখছো ? রান্নাঘরে গিয়ে দেখো ,চিকেন আনা হয়েছে। সেকি ? এতো বেলায় ? আমার তো দুপুরের রান্না প্রায় শেষ। না --না --এখন না ,রাতের বেলায়। গরম গরম রুটি আর চিকেন। তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে দেখি ,সত্যি সত্যিই চিকেন আনা হয়েছে। উফঃ! কি আর বলবো........। ঠিক আছে ,চিকেনটা ম্যারিনেট করে রাখি ,রাতে চিকের রসা রেঁধে দেবো .......গরম গরম রুটির সঙ্গে সবার খুবই ভালই লাগবে।
চিকেন পরিষ্কার করে একটা পাত্রে নিয়ে পেঁয়াজ বাটা ,রসুন বাটা ,আদা বাটা ,টমেটো কুচি ,হলুদ গুঁড়ো ,জিরে গুঁড়ো ,ধোনে গুঁড়ো ,লাল লঙ্কাগুঁড়ো ,অল্প কাঁচালঙ্কা বাটা ,নুন ,চিনি ,সর্ষের তেল সমস্ত মিশিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে মেখে মেখে নিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলাম। ম্যারিনেট হোক। রাতে রাঁধবো ...........
উপকরণ :-
চিকেন - ১.৫ কেজি ( পরিষ্কার করে টুকরো টুকরো করে কাটা )
পেঁয়াজ - ৫-৬ টি ( মাঝারি সাইজের ,টুকরো টুকরো করে কেটে ,মিক্সিতে বেটে নেওয়া )
রসুন বাটা - ২-২.৫ চামচ
আদা বাটা - ২-৩ চামচ
টমেটো - ১টি ,কুচানো
কাঁচালঙ্কা বাটা - ২-৩ চামচ
হলুদ - ২-৩ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ৩-৪ চামচ
ধনেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১.৫-২ চামচ
কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো - ১-২ চামচ
ঘি - ২ চামচ মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
বিকালে ম্যারিনেট চিকেনের পাত্রটা বাইরে বের করে রাখলাম। চা - টা খাওয়ার কিছুক্ষন পর চিকেনের ম্যারিনেট করা পাত্রটা যখন বেশ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চলে এলো , তখন পাত্রের ঢাকা খুলে চিকেনের মিশ্রণ একটা কড়াইতে নিয়ে ,বেশি আঁচে গ্যাসে চাপলাম। মিশ্রণ ভালো করে গরম হয়ে উঠলেই ,একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যে সুন্দর চিকেন রান্নার গন্ধে চারিদিক ভরে উঠলো। ঢাকা খুলে দেখি রান্না থেকে প্রচুর জল বেরিয়েছে। একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে ,ঢাকা দিয়ে আবার রান্না হতে দিলাম। এইভাবে কয়েকবার করার পর ,একসময়ে লক্ষ্য করলাম ,চিকেন নরম হয়ে রান্না বেশ মজে গিয়েছে। রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। কি দারুন হয়েছে ! কত সহজ ভাবে রান্না। অথচ কত টেস্টি টেস্টি। ঢাকা খুলে আঁচ বাড়িয়ে দিলাম অল্প গরম মশলার গুঁড়ো আর ২-১ চামচ ঘি। চিকেন রান্না রসা রসা করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে ,চিকেন ঢাকা দিয়ে রাখলাম।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই খুব এনজয় করে রুটি মাংস খেতে খেতে বলতে লাগলো ,কি ভালো হয়েছে ! খুব ভালো হয়েছে ! হঠাৎ একজন বলে উঠলো ,দুপুরে জানলায় দাঁড়িয়ে অতো কি ভাবছিলে গো ?...... কে ? আমি ? ........ভাবছিলাম এই ভয়ঙ্কর বর্ষায় ,আমরা যারা পাকা ছাদের তলায় ,তারা তো বর্ষার আনন্দ অনুভব করছি, কিন্তু ভাবো যাদের কোনো ভালো বাড়ি নেই ,পথে ঘাটের কাজেই দিন চলে ,এই বর্ষায় তাদের কত কষ্ট। রোজগার বন্ধ তো খাওয়া দাওয়াও বন্ধ। আমার কথায় সবার হাতই থালাতে থেমে গেছে .....বলে উঠলো সরি ! সরি !
সরি কেন ? সব আনন্দের মাঝেই যদি আমরা একটুও ওদের কথা ভাবি ,অল্প পাশে থাকার চেষ্টা .......মানে খুব অল্পই চেষ্টা করি,তবে কিন্তু একটা আলাদা আনন্দ পেতেই পারি।সবার মুখ দেখলাম খুশিতে ঝলমল। ঠিক বলেছো। ঠিক বলেছো। দারুন ! সত্যিই দারুন ! আমরা চেষ্টা করবো। খুব ভালো হবে বলো? ...ভালো তো হবেই। এই চিন্তা টুকুই তো খুব ভালো ..........
আপনারাও ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন।
Comments