'' এসো হে বৈশাখ -এসো হে ''............. অবশেষে সবার আহ্বানে এসে গেলেন -বৈশাখ মাস। সূচনা হলো আরো একটি নতুন বছরের।আর আমার মনে হয় - এই নতুন বছরে সব্বারই অনেক অনেক ইচ্ছের মাঝে একটার ইচ্ছের মিল অবশ্যই আছে ........যেটা হলো আমরা সবা---ই যেন খুব খুব ভালো থাকি ,সুস্থ থাকি আর প্রচুর আনন্দে ভরে থাকি।
বৈশাখ -জৈষ্ঠ্য গ্রীষ্মকাল। বছরের ছয় ঋতুর প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল।আমাদের দেশে প্রতিটি কালের গুরুত্ব অসীম। এক এক কালের রূপ ,স্বভাব আর প্রয়োজন এক এক রকম। কিন্তু প্রত্যেককেই আমাদের চাই চাই।গরমের দাবদাহ থাকলেও এই কালের চাহিদাও অনেক। নানা সুন্দর সুন্দর ফল ,ফুল আর সবজিতে ভরে ওঠে এই সময়।অনেক অনেক তাপ উত্তাপের জমায়েতে মাঝে মাঝে দেখা দেয় ভয়ঙ্কর অথচ সুন্দর কালবৈশাখীর । যখন গরম অসহ্য ,অসহনীয় -----তখনই একটু বৃষ্টি বড়োই শান্তির, বড়োই আরামের আর অনেক অনেক স্বস্তির।আর এই গ্রীষ্মের দাবদহই নিয়ে আসে বর্ষার সুখবৃষ্টি ।
কিন্তু এই অসহ্য গরমে আমরা সব্বাই আরো একটা জায়গায় একটু স্বস্তি খুঁজি ,তা হলো আমাদের খাওয়া দাওয়াতে।প্রখর গরমে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ,একটু হালকা হালকা খাবার খেতে বড়োই ভালো লাগে।যেমন আমাদের রান্নাঘরের খুবই আকর্ষণীয় উপাদান হলো পোস্ত । পোস্ত দিয়ে তৈরি যে কোন খাবার গরমে কিন্তু সবার প্রিয় । কারণ ?..........কারণ -খেয়ে ভীষণ শান্তি , অনেক স্বস্তি আর খুব সুস্বাদু ও বটে।
এবার বলি - গ্রীষ্মকালের কিছু সবজি বা ফলে জলের পরিমান বেশি থাকে ,যেমন তরমুজ ,ফুটি ,ঝিঙে ,ধধল,শসা ইত্যাদি ইত্যাদি। গ্রীষ্মকালে এই ধরনের সবজি বা ফলের প্ৰয়োজনীয়তা কিন্তু অসীম।গরমের দাবদাহে এই ধরণের ফল বা সবজি আমাদের শরীরের জলের মাত্রা ঠিক ঠাক রাখতে খুবই সাহায্য করে। তাই গরমে এই রকমের ফল সবজি আমাদের অবশ্যই খাওয়া উচিত।
আজ বাজারের থলি খুলে প্রথমেই দেখি বেশ খানিকটা ঝিঙে। ভেবেই নিলাম ,আজ আমি ঝিঙে -পোস্ত রাঁধবো। গরম ভাতে প্রথম পাতে বা জলে ভেজা ঠান্ডা ভাতের সঙ্গে অসাধারণ। রান্নাঘরে তো পোস্ত রয়েইছে ,খানিকটা জলে ভিজিয়েই দিলাম। সবাইকে জলখাবার খাইয়ে শান্ত করে ,নিশ্চিন্তে আমার রান্নায় মন দিলাম।
উপকরণ :-
ঝিঙে -১ কিলো গ্রাম (সুন্দর করে খোসা ছাড়িয়ে পাতলা পাতলা করে কাটা )
পোস্ত- ৭৫ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম
কাঁচালঙ্কা - ৭-৮টি ( কয়েকটি পোস্তর সঙ্গে মিহি করে বাটা ,বাকি গুলো অর্ধেক করে ভাঙা )
শুকনোলঙ্কা -২টি ফাটানো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্বতি :-
জল ছেঁকে পোস্ত মিক্সিতে নিলাম ,দিলাম ৩-৪টি কাঁচালঙ্কা। মিহি করে বেটে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হতেই দিলাম ২টি ফাটানো শুকনোলঙ্কা আর জলে ধোয়া কাটা ঝিঙের টুকরোগুলো। দিলাম নুন আর চিনি। বেশি আঁচে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে ঝিঙে সেদ্ধ হতে দিলাম।
কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে দেখি ঝিঙে বেশ নরম হয়ে গেছে আর বেশ খানিকটা ঝিঙের থেকে জলও বেড়িয়েছে । আঁচ বাড়িয়ে জল শুকিয়ে নিয়ে ,বাটা পোস্ত কড়াইতে দিয়ে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ঝিঙে আর পোস্ত নাড়তে লাগলাম। এবার অর্ধেক করে রাখা কাঁচালঙ্কা গুলো কড়াইতে দিয়ে,ঝিঙে -পোস্ত নাড়াচাড়া করতে করতে রান্নার স্বাদও দেখে নিলাম। ঝিঙে -পোস্ত মাখো মাখো আর একটু ভাজা ভাজা হতেই,পোস্ত ভাজার গন্ধে রান্নার জায়গা ভরে গেলো । গ্যাস বন্ধ করে দিলাম। ঝিঙে -পোস্ত তৈরি।
খেতে বসে সবাই একই কথা বললো ,গরম ভাতে ,প্রথম পাতের শুরুটা কিন্তু আজ একেবারে সঠিক হয়েছে। ওঃ! কি অপূর্ব স্বাদ। মন ভরে গেলো ,খাওয়ার ইচ্ছেটাও বেড়ে গেলো। তারমধ্যেই ২-১জন বলে উঠলো ,রাতের জন্য একটু তুলে রেখো ,ভেজা ভাতের সঙ্গে খাবো। সবার এতো আনন্দ দেখে ,কি আনন্দ যে হচ্ছিলো , সেটা মনেই যত্ন করে রাখলাম। আনন্দ করতে করতে খাওয়া দাওয়া শেষ হলো।
আনন্দটাই তো সব .........
আপনারাও আনন্দে থাকুন, ভালো থাকুন, আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন।
Opmerkingen