উফ !! কি গরম ! কি গরম !! গরমের তান্ডবে তো আ.......র পারা যাচ্ছে না | রোজ রোজ শুধুই তাপমাত্রা বাড়ার খবর আর সাবধানে থাকার সতর্কবাণী | ভয়ে চিন্তাতে সব্বাই অস্থির | কিন্তু কাজ !! কাজের কি হবে ? নিজের নিজের কাজ তো সবাইকে করতেই হবে | আর সেই ক্ষেত্রে সাবধানতা নিয়েই অনেককে বাইরেও বেরোতে হবে |
কিন্তু এই অবস্থায় সবচাইতে বড়ো সমস্যা খাওয়া দাওয়ায় | কিচ্ছু খেতে ইচ্ছে করছে না | ভালো লাগছে শুধুই জল , তবে মাঝে মধ্যে ঠান্ডা কিছু পেলে একটু স্বস্তি | এই সময়ে প্রতিটি ঘরে যারা রান্নাঘরের দায়িত্বে আছেন , তারা কিন্তু চিন্তায় পরে যাচ্ছেন , এই ভেবে যে , সবাইকে ভালো রাখবেন কিভাবে | অনেক দায়িত্ব যে !! সব সময়ের চিন্তা , কি করে খাওয়ার টেবিলের পরিবেশ আনন্দে খুশিতে ভরিয়ে তোলা যায় | সংসারকে সুস্থ সবল রাখতে , সবাইকে যে ভালো রাখতেই হবে | রাখতে..........ই হবে |
আমার রান্নাঘরেও আমার সেই একই দশা | ভেবেই পাচ্ছি না , কি রাঁধি ....কি রাঁধি | কি রান্না করলে সবার খাওয়াতে একটু রুচি আসবে | শরীর মনে তৃপ্তি আসবে | ভাবতে ভাবতে বাজারের থলিতে হাত রাখলাম | প্রথমেই দেখি বেশ টাটকা টাটকা কিলোখানেক পটল | এখন বাজারে কিন্তু পটোলের আমদানি বেশ ভালোই | আর এই গরমে পটল ভাজা , পটল চচ্চড়ি দিয়ে জল ভেজা ভাত একটু খাওয়াও যাচ্ছে | কিন্তু রোজ রোজ একই রকম ! আজ একটু অন্য কিছু করলে হয় না ?
থলি থেকে সব কিছু নামাতে নামতে , দুধের প্যাকেট টাও নামিয়ে রাখলাম | হঠাৎ মবে হলো , আজ যদি দুধ পটল রাঁধি , একটু পরিবর্তনও আসবে , আর মনে হয় না এই টেস্টি টেস্টি রান্না কারোর মন্দ লাগবে | মন ভাবছে ...আহা হা এই সুন্দর মেনুটা তো মাঝে মধ্যেই রাঁধতে পারি | ঠান্ডা ঠান্ডা একটা মেনু , অথচ দারুন টেস্টি টেস্টি | অনেকটা স্বস্তি পেলাম | আজ খাবার টেবিলে সবাই মনে হয় একটু ও খুশি হবে | ভাবতে ভাবতে আমিও যেনো একটু বেশিই খুশি খুশি |
সব চাইতে আনন্দের কথা আজ ছুটির দিন | আমরা সব্বাই আজ বাড়িতে | সকাল থেকেই লক্ষ্য করেছি খাওয়া দেওয়ার ব্যাপারে কারোর কোনো উৎসাহ নেই , জীজ্ঞাসাও নেই | আমিও কাউকেই কিছু জানালাম না | সবাইকে হালকা জলখাবার খাইয়ে , রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম দুপুরের রান্না সারতে | যত বেলা বাড়বে , এই গরমে রান্নাঘরে ও ততো কষ্ট | তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি সব সেরে ফেলবো | নিজেকে তো ভালো থাকতেই হবে , নাহলে সবাইকে ভালো রাখবো কিভাবে | মোট কথা , ভালো থাকতেও হবে ....ভালো রাখতেও হবে | .........যাহোক রান্নাটা আগে সেরে ফেলা যাক |
প্যাকেট থেকে দুধ একটা পাত্রে ঢেলে নিলাম | ১৬ - ১৭ টা পটোলের খোসা ভালো করে বটিতে চেঁছে নিলাম | প্রতিটি পটোলের দুদিক কেটে বাদ দিয়ে একটু করে চিরে নিলাম | এবার জলে বার বার ধুয়ে নিয়ে , ভালো করে জল ঝরিয়ে এক চিমটে নুন মাখিয়ে নিলাম | নিয়ে নিলাম ইঞ্চি দেড়েক আদা | সুন্দর করে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে নিলাম | শুরু করবো রান্না .....দুধ - পটল (Dudh - Potol) |
উপকরণ :-
পটল - কিলো খানেক , ১৬ - ১৭ পিস্
আদা - ইঞ্চি দেড়েক
দুধ - ৫০০ গ্রাম
তেজপাতা - ২-৩টি
ছোট এলাচ - ৪-৫টি , একটু করে ফাটানো
লবঙ্গ - ৪-৫টি
দারচিনি - ২-৩ টুকরো , ছোট ছোট সাইজের
হলুদগুঁড়ো - ১/২ চামচ থেকে ১ চামচ , কম হলেই ভালো
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১.৫ থেকে ২ চামচ , ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো
গরম মশলার গুঁড়ো - ১/২ চামচের মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো , অবশ্য অবশ্যই লাগবে
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো
ঘি - ১থেকে ২ চামচ
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমেই , আদার টুকরো গুলো মিক্সিতে নিয়ে খুব মিহি করে বেটে ফেললাম | একটা পাত্রের মধ্যে প্রয়োজনমতো হলুদগুঁড়ো , লঙ্কাগুঁড়ো আর গরম মশলার গুঁড়ো নিয়ে জলে ভিজিয়ে দিলাম | মশলা মজে গেলে রান্নাটা ভালো হবে |
এই রান্নাটা কিন্তু সাদা তেলেই হবে | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে উঠতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম ৫-৬টা গোটা নুন মাখানো পটল | একটা ঢাকা দিয়ে পটোলগুলো মজতে দিলাম | কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে পটোলগুলো উল্টে দিলাম | আবার পটোলগুলো খানিক্ষন মজতে দিলাম |
পটোলগুলো মজে গেছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে পটোলগুলো কয়েকবার নাড়াচাড়া করে কড়াই থেকে তুলে একটা পাত্রে রাখলাম | আবার আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম আরো ও ৫-৬টি পটল | আগের পদ্ধতি মতো এগুলো ও ভেজে ফেললাম | এইভাবে সব পটল ভেজে ফেললাম |
এইবার কড়াই পরিষ্কার করে গ্যাসে চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সাদা তেল | তেল হালকা গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম ২-৩টে গোটা তেজপাতা , ৪-৫টা ফাটানো ছোট এলাচ , ৪-৫টা লবঙ্গ আর ২-৩ টুকরো দারচিনি | একটু নেড়ে চেড়ে নিয়ে দিয়ে দিলাম বেটে রাখা আদা | বেশি আঁচে একটু নেড়ে নিয়ে দিয়ে দিলাম , ভেজানো মশলা টা | দিলাম প্রয়োজনমতো নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে সমস্ত নাড়তে লাগলাম | মশলা ভাজার সুন্দর গন্ধ পেতেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম পাত্রে ঢেলে রাখা দুধ | পাত্র ধুয়ে দিয়া দিলাম অল্প একটু জল |
বেশি আঁচে ঝোল টগবগ করে ফুটে উঠতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম একে একে ভেজে রাখা পটোলগুলো | দু - একবার পটল সমেত ঝোল ফোটার পর , আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে ভালোভাবে দুধ - পটল মজতে দিলাম | কি অপূব গন্ধ !! অপূর্ব ! অপূর্ব !! সুন্দর লোভনীয় গন্ধ রান্নাঘর ছাড়িয়ে সারা বাড়িতেই ছড়িয়ে পড়তে লাগলো | মনে তো হচ্ছে আর চেপে রাখতে পারবো না | নানা প্রশ্ন এলে বলে | .....ঠিক তাই , কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠলো .....'.আহা আহা ....কি রান্না হচ্ছে ? ' ........ আরো আরো ২-১ জনের গলা |
তবে এই গরমে কেউ কিন্তু রান্নাঘরের দিকে ছুটে এলো না | মনে হচ্ছে প্রখর গরমে সব্বাই ক্লান্ত |ভালোই হলো | উত্তর না দিয়েই চুপ করে থাকলাম | খাবার টেবিলে সবাই তো বুঝতেই পারবে | এদিকে রান্না হয়ে এসেছে মনে হতেই , ঢাকা খুলে রান্না চেখে দেখলাম | এক অপূর্ব স্বাদে জিভ ভরে গেলো | ঠিক হয়েছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে রান্নার রসার পরিমান ঠিক করে নিলাম | দিলাম ১- ১.৫ চামচ ঘি | একটু নেড়ে গ্যাস বন্ধ করলাম | দিলাম একটা ঢাকা | ঢাকা দিলাম বটে , কিন্তু ছড়িয়ে পড়তে লাগলো রান্নার মিষ্টি মিষ্টি সুন্দর গন্ধ | গন্ধই যেন বলছে এই কঠিন গরমের একেবারে আদর্শ রান্না ,আমার রান্নাঘরের এই দুধ - পটল (Dudh - Potol) |
সবাইকে ডেকে নিলাম খাওয়ার টেবিলে | পাতে পাতে এগিয়ে দিলাম ভাত আর দুধ পটল | সবাই মুগ্ধ | গরমে যেন শান্তির পরশ | স্বাদের সুখ পরশ সবাইকে কিছুক্ষন ভরিয়েই রাখলো | কোনো কথা নয় | শুধুই আনন্দের অনুভূতি | আর এই অনুভুতিতেই ,আমার বাড়ির আমরা সব্বাই আজ বেজায় খুশি |
আপনারাও খুশি খুশি থাকুন | ভালো খান আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন | আনন্দে থাকুন |
Bình luận