এই সময়ে বাজারে তো সবুজ সবজি পটোলের ছড়াছড়ি | আমার রান্নাঘরেও আমি পটোলের নানা মুখরোচক মেনু তৈরি করি | তার একটা বড়ো কারণ , আমরা বাড়ির সব সদস্যরাই , পটল খেতে খুব ভালোবাসি | আজকেও আমি পটোলের খুব খুব মুখরোচক একটা মেনু তৈরি করে সব্বাইকে খুশি করে দেবো | তৈরি করবো পটল - চিংড়ি - বাটা | গরম - ভাতে প্রথম - পাতে এর স্বাদের চমক ....না খেলে , বুঝতে পারা যাবে না | খেতে হবে ....আর একবার খেলেই বার বার - বার বার খেতে ইচ্ছে করবেই করবে | ভালো খেতে আমরা সবাই ভালোবাসি | আর তাইতো ভালো ...ভালো খাই , বারবার খাই , আর বারবারই চাই সব্বাইকে খাওয়াতে |
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম , আমরা সব্বাই একদিন একসঙ্গে খাবার টেবিলে বসে জমিয়ে জমিয়ে পটল - চিংড়ি - বাটা খাবো | রোজ রোজ ভাবি , আবার নানা কথায় কথায় ভুলেও যাই | তবে কেন জানিনা ,হঠাৎই আজ সকালে ঘুম ভেঙেই মনে হলো , আজ ছুটির দিন , সব্বাই আমরা বাড়িতে , আজ পটল - চিংড়ি - বাটা করা যেতেই পারে (Potol - Chingri - Bata) |
তাই বাজার থেকে আনিয়ে নিয়েছি ৫০০ - ৬০০ গ্রাম মতো দেশি ছোট ছোট কচি কচি পটল আর ৩৫০ গ্রামের মতো ছোট ছোট হরিনা চিংড়ি |
আজকে ছুটির দিন |তাই হড়বড় হড়বড় ভাবটাও একটু কম | ধীরে সুস্থে সবাই জলখাবার শেষ করে , নিজের নিজের নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম | আমি আমার রান্নার কাজটা একটু এগিয়ে নিতে চাইলাম | সকালের কাজগুলো যখন সেরেই ফেলেছি , তবে দেরি কেনো ? রান্নাঘরে ঢুকেই পড়ি ! একটু যত্ন নিয়েই আজকের দুপুরের মেনুগুলো রেঁধেই ফেলি !! কি বলেন ? তাইতো ?? ঠিক বলেছি তো ???
উপকরণ :-
কচি কচি দেশি পটল - ৫০০ - ৬০০ গ্রামের মতো , খোসা হালকা করে চেঁছে নিয়ে , কুচিয়ে কেটে নিয়ে , জলে ধুয়ে , জল ঝরিয়ে রাখা
ছোট ছোট চিংড়ি - কেটে কুটে পরিষ্কার করে নিয়ে , জলে ধুয়ে একচিমটি নুন মাখানো
আদা - ইঞ্চি দেড়েক , খোসা ছাড়িয়ে , টুকরো টুকরো করে কেটে , জলে ধুয়ে রাখা
রসুন - ছোট্ট একটা ,কোয়া ছাড়িয়ে , জলে ধুয়ে রাখা
কাঁচালঙ্কা - গোটা গোটা ৫-৭টা , ঝাল কিন্তু নিজের নিজের পছন্দমতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো , এই বাটাটা সর্ষের তেলে নাড়লেই , দারুন টেস্টি টেস্টি হয়
পদ্ধতি :-
আজ প্রথমেই রান্না করছি পটল - চিংড়ি - বাটা | কুটে ধুয়ে রাখা পটোলের টুকরোগুলো মিক্সিতে নিয়ে মিহি করে বেটে নিলাম | বাটাটা একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম | এবার বাকি কুচানো পটোলের টুকরোগুলো মিক্সিতে নিয়ে নিলাম , সঙ্গে দিলাম ৪-৫টা গোটা কাঁচালঙ্কা , আদার টুকরোগুলো , রসুনের ছাড়ানো কোয়াগুলো আর এক চিমটে নুন | দুবার মেশিন ঘুরিয়ে সমস্ত বেটে নিয়ে , ওই মিক্সি বাটির ঢাকা খুলে , তার মধ্যে নিয়ে নিলাম , নুন মাখানো চিংড়িগুলো | এবার চিঙড়ি সমেত সব কিছু একদম মিহি করে বেটে নিয়ে , আগের বাটা রাখা পাত্রের মধ্যেই সবটা ঢেলে দিলাম |
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল খুব ভালোমতো গরম হয়ে উঠতেই আঁচ কমিয়ে , কড়াইয়ের তেলের মধ্যে ঢেলে দিলাম পাত্রের মধ্যে বেটে রাখা পটল - চিংড়ির মিশ্রণটি | বেশি আঁচেই কড়াইয়ের মধ্যে ঢালা মিশ্রণটি নাড়তে লাগলাম | মিশ্রনের মধ্যে দিলাম , এক চিমটে হলুদগুঁড়ো , প্রয়োজনমতো নুন , আর প্রয়োজনমতো চিনি | আবার নাড়াচাড়া করতে শুরু করে দিলাম |
নাড়তে নাড়তে মিশ্রনের জল শুকিয়ে আসছে মনে হতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ের মিশ্রণটা খানিকক্ষণ মজতে দিলাম | আবার আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে , দিলাম আঁচ কমিয়ে | আবার বাটাটাকে কিছুক্ষন মজতে দিলাম | এইভাবে কয়েকবার করার পর , মনে হলো আরো একটু তেল লাগবে | তাই এবার কড়াইতে দিলাম প্রয়োজন মতো আর একটু সর্ষের তেল | আঁচ দিলাম বাড়িয়ে | আবার শুরু করলাম সুন্দর করে
মিশ্রনের নাড়াচাড়া | প্রায় হয়ে এসেছে মনে হতেই আঁচ কমিয়ে রান্নায় নুন , ঝাল , মিষ্টির তাক দেখে নিলাম | বাঃ ! বাঃ! কি ভালোই না লাগছে !! সত্যি দারুন হয়েছে কিন্তু !!!
আঁচ বাড়িয়ে আবার সমস্ত মিশ্রণ নেড়েচেড়ে নিয়ে , একটা পাত্রে তুলে রাখলাম | দিলাম ঢাকা | রান্নায় ঢাকা তো দিলাম , কিন্তু রান্নার অপূর্ব গন্ধ যে আমার রান্নাঘরের আনাচে কানাচে লুকোচুরি খেলেই চলেছে | জিভে জল আনা গন্ধ !! মন বলছে এই অপূর্ব গন্ধে , সবার ক্ষিধে ক্ষিধে ভাবটা একটু তাড়াতাড়িই এসে যাবে | তাই তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি বাকি সব রান্না সেরে নিলাম |
দুপুর ..লাঞ্চ টাইম ...সবাই আমরা খাবার টেবিলে | সবাইকে পাতে পাতে দিয়েছি গরম গরম ভাত আর সঙ্গে খানিকটা করে মুখরোচক পটল - চিংড়ি - বাটা (Potol - Chingri - Bata) | আমিও নিয়েছি | শুরু করলাম খাওয়া | তবে আশ্চর্য হয়ে গেলাম , খাওয়ার এই অপূর্ব স্বাদে , আমাদের কারো মুখেই যেন কোনো কথা সরছে না | সবার চোখে মুখে তৃপ্তির এক দারুন ছবি | অন্য কি রান্না আছে , কারোরই যেনো জানার ইচ্ছেটাই নেই | তবে কিন্তু ,কেউ কেউ আবার ও চেয়ে নিলো খানিকটা করে পটল - চিংড়ি - বাটা | এক রান্নাতেই তৃপ্তি সহকারে প্রায় সবারই মধ্যাহ্ন ভোজের খাওয়া শেষ | বাকি রান্না বান্না তুলেই রাখতে হলো | বেশ ভালোই হলো এক রান্নাতেই আজ বাজিমাত !!!
ভালো থাকবেন | ভালো ভালো খাবেন | আনন্দে থাকবেন |আর অবশ্যই সুস্থ থাকবেনই থাকবেন |
Comentários