মটর - বড়ায় - তেতো - শুক্তো | Teto - Shukto
- Kaveri Nandi
- Apr 13
- 4 min read

গ্রীষ্ম প্রধান এই বাংলায় , গ্রীষ্মকালে প্রায় প্রতি বাঙালিরই মধ্যাহ্ন - ভোজের এক দারুন মেনু শুক্তো |প্রখর গ্রীষ্মের দহন - জ্বালা থেকে শরীর - মন আর পেট কে শান্ত রাখতে , ভাতের পাতে যে কোনো এক ধরণের শুক্তোর মেনুই .....তুলনাহীন ....তুলনাহীন | শুক্তো ...শুধু যে শরীর - মন কে ঠান্ডা করে , তা নয় কিন্তু ....পুষ্টিতে ভরপুর আর রোগ প্রতিরোধে ....এক অসাধারণ মেনু | তাই তো আমার বলা , ঔষুধীগুনে ভরপুর যে কোনো রকমের শুক্তোর মেনু , অবশ্যই আমাদের পাতে মাঝে - মধ্যে রাখতেই হবে | মোট কথা , ভালো থাকতে হলে ভালো তো খেতেই হবে .....তাই না ???
আজ রবিবারের ছুটির দিন | কাল রাতেই ভেবে রেখেছি , আজ খুব টেস্টি টেস্টি করে মটর ডালের বড়া দিয়ে একটু তেতো শুক্তো রাঁধবো | গ্রীষ্ম ঋতু তো জানান দিচ্ছেই , যে , আমি আসছি ....আমি আসছি | তাই শরীর মন কে আরাম দিতে , এখন থেকেই শুক্তো মেনুকে যদি মাঝে - মাঝে মধ্যাহ্ন ভোজের সঙ্গী করতে পারি তো , আমাদেরই উপকার , আমাদেরই ভালো | ইমিউনিটি বাড়ানোর এক অসাধারণ মেনু |

কাল রাতের খাওয়া - দাওয়া শেষ হতেই , এক কাপ মতো মটর ডাল জলে ভিজিয়ে রেখেছিলাম | এবার দেখার পালা আমার সবজির ঝুড়িতে আজ কি কি সবজি আনিয়ে রেখেছি | সবজি তো অনেক রকমই রয়েছে , তবে শুক্তো রাঁধার জন্য আমি নিলাম , কয়েকটা সোজনেডাঁটা , ৪-৫টা কচি পটল , ২টো আলু , ২টো ছোট বেগুন আর ১০০ - ১৫০ গ্রামের মতো কচি কচি উচ্ছে | আর কিছু দেব না | কারণ সঙ্গে রেখেছি ,মটর - ডালের বড়া | আজ দুপুরে জমিয়ে খাবো ' মটর - বড়ায় - তেতো - শুক্তো ' (Teto - Shukto) |
সকালের সব কাজ কর্ম সারা | আবার চলে এসেছি প্রিয় রান্নাঘরে | প্রথমেই রাঁধবো টেস্টি টেস্টি শুক্তো ....'' মটর - বড়ায় - তেতো - শুক্তো '' | অনেকদিন বাদে শুক্তো রাঁধবো | গরমের আগমনে এক দারুন মেনু .....
উপকরণ :-

মটর ডাল - ১ কাপ , জলে ভেজানো
সজনে ডাটা - ১০০ -১৫০ গ্রামের মতো , কেটেকুটে পরিষ্কার করে , জলে ধুয়ে রাখা
পটল - কচি কচি ৪-৫টা , খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি ২ টুকরো করে কেটে , জলে ধুয়ে জল ঝরানো
আলু - ২টো , মাঝারি সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি ৬ টুকরো করে কেটে জলে ধুয়ে রাখা
বেগুন - ছোট সাইজের ২টো , লম্বা লম্বা টুকরো করে কেটে , ধুয়ে , জল ঝরানো
উচ্ছে - ছোট ছোট ১০০ - ১৫০ গ্রামের মতো , লম্বালম্বি ২ টুকরো করে কেটে , জলে ধুয়ে রাখা
আদা - ইঞ্চি ২য়েক বা আরো একটু বেশি , খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা

পাঁচ ফোড়ন - ১ চা চামচ - ১.৫ চা চামচ
রাঁধুনি - ১ চা চামচ - ১.৫ চা চামচ
পোস্ত - ২ চা চামচ
দুধ - ১ কাপ মতো
কালো সর্ষে - ১ চা চামচ - ১.৫ চা চামচ
ময়দা - ১ চা চামচ - ১.৫ চা চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
ঘি - ২-৩ চা চামচ আর .......
আর ২টো গোটা শুকনোলঙ্কা , একটু করে ফাটানো | শুক্তো তে কোনোদিন ঝাল দেওয়া যায়না | কিন্তু আমি কড়াইতে যে তেলে শুক্তো রাঁধবো , সেখানে ফোড়ন ছাড়ার আগে , তেলে ছেড়ে দেবো ২টো গোটা শুকনো লঙ্কা |
কম আঁচে একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে তুলে নেবো | তারপর রান্না শুরু করতে দেবো ফোড়ন | তেলের মধ্যে এই লঙ্কা দুটো ভাজার জন্য , তেলে এক দারুন সুন্দর মজাদার গন্ধ আর স্বাদের আভাস পাওয়া যাবে | রান্নায় আসবে না কোনো ঝালের স্বাদ কিন্তু আসবে টেস্টি টেস্টি স্বাদের এক নতুন মাত্রা | তবে ইচ্ছে না হলে অবশ্যই দেবেন না | আবশ্যক নয় তো !!!
পদ্ধতি :-
রান্নার শুরুই প্রথমেই ভেজানো মটর ডাল জল ঝরিয়ে নিয়ে , এক চিমটে নুন আর এক চিমটে চিনি দিয়ে মিক্সিতে নিয়ে , মিহি করে বেটে একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম | গ্যাসে বেশি আঁচে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হতে হতে ডাল বাটা একটু ফেটিয়ে নিলাম | তেল গরম হয়ে গেছে মনে হতেই আঁচ কমিয়ে , বাটা ডাল ছোট ছোট বড়ার আকারে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে বড়া ভেজে তুলে নিলাম | বড়া ভাজতে ভাজতে প্রথমে বেটে রাখলাম আদা , তারপর পোস্ত | এরপর মিক্সিতে আধ ভাঙা করে রাখলাম কালো সর্ষেগুলো | বেটে রাখা পোস্তর বাটিতে দিয়ে দিলাম বেটে রাখা আদা বাটা আর ১ - ১.৫ চা চামচ ময়দা | তৈরি করে নিলাম পোস্ত , আদা আর ময়দার একটা মিশ্রণ
বড়া ভাজা হয়ে গেছে , এবার একে একে ভেজে ফেললাম কাটা আলুর টুকরোগুলো , পটোলের টুকরো গুলো , বেগুনের টুকরো গুলো আর উচ্ছের টুকরোগুলো | কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে আবার গ্যাসে বসালাম | দিলাম প্রয়োজনমতো তেল | তেল গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে ফাটানো শুকনোলঙ্কা দুটো তেলে একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে তুলে রাখলাম | রান্না শেষে রান্নার উপরে রেখে দেবো |
এবার কম আঁচে কড়াইয়ের তেলে ফোরণে দিলাম , পাঁচফোড়ন , রাঁধুনি আর মিক্সিতে রাখা আধভাঙা কালো সর্ষেগুলো | আঃ ...হা ..হা ...হা !!! কি অপূর্ব গন্ধ | দিয়ে দিলাম বেটে রাখা অর্ধেক আদার মিশ্রণ | কম আঁচেই একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম জলে ধোওয়া কেটে রাখা সজনে ডাটাগুলো | বেশি আঁচে নাড়তে লাগলাম | ২ - ৪ বার নেড়ে নিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ভেজে রাখা আলু আর পটল | কম আঁচে ঢাকা চাপা দিয়ে একটু মজিয়ে নিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম ভেজে রাখা উচ্ছের আর ভাজা বেগুনের টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে হালকা হাতে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ দু - একবার নেড়ে নিয়ে , কড়াইতে ঢেলে দিলাম, পোস্ত - আদা - আর ময়দার মিশ্রণটা . ভেজে রাখা মটর ডালের বড়া গুলো আর রসার পরিমান ভেবে ১ কাপ দুধ আর অল্প খানিকটা জল |
বেশি আঁচে রান্না ফুটে উঠতেই , আঁচ কমিয়ে দিলাম | অল্প আঁচে রান্না ফুটছে আর এক সুন্দর লোভনীয় গন্ধে চারিদিক মো মো ....মো মো করছে | কিছুক্ষন রান্না মজে যেতেই , মনে হলো রান্না হয়ে এসেছে | রান্না একটু চেখেও নিলাম | স্বাদের মধুরতায় তো আমি অবাক ! এতো সুন্দর !! এতো সুন্দর খেতে হয়েছে !!! বাঃ !! বেশ ...বেশ !! খুব ভালো !! এবার রান্নায় দিয়ে দিলাম ২ চামচ ঘি আর প্রথমে ভেজে রাখা শুকনোলঙ্কা ২টো | হালকা হাতে নেড়েচেড়ে আঁচ বাড়িয়ে রান্নার রসার পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম | গ্যাস বন্ধ ও হলো , রান্নায় ঢাকা ও পড়লো , কিন্তু ?......কিন্তু লোভনীয় গন্ধটা ??.....রয়েই গেলো , র......য়েই গেলো .............................
লোভনীয় মিষ্টি মিষ্টি '' মটর - বড়ায় - তেতো - শুক্তোর '' গন্ধটা এখন আমাদের দুপুরের খাবার টেবিলে , আমাদের সঙ্গে (Teto - Shukto) | গরম ভাতে প্রথম পাত শুক্তোর স্বাদে গন্ধে মাখামাখি | খাওয়ার আনন্দে আমরা সবাই আপ্লুতো ,আমরা সবাই বড়োই খুশি | তৃপ্তিতে মন - প্রাণ ভরা ..........
ভালো খান , ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন |
Commentaires