top of page

মাছের - তেলে - পাঁচমিশালি - সবজি | Macher - Teler - Chorchori



বাজারে গিয়ে আজ একটা গোটা কাতলা মাছ কিনে কেটেকুটে টুকরো টুকরো করে নিয়ে এসেছি | ভাবলাম , আজ ছুটির দিন | সব্বাই বাড়িতে | জমিয়ে কালিয়া স্বাদে কাটা কাতলা রাঁধবো | ভাবতে ভাবতে মাছের কাটা টুকরো গুলো ধুতে গিয়ে দেখি , টুকরো গুলোর মধ্যে অল্প একটু মাছের তেল | মাছটা খুবই টাটকা , তাই মাছের তেলটাও খুব ভালো |


ভাবলাম , এই তেলটা দিয়েও তো কিছু একটা মুখরোচক রান্না করতেই পারি | তবে ! এই অল্প তেলটুকু দিয়ে তো সবার পাতে দেওয়ার মতো, মাছের তেলের বড়া তৈরি হবে না ! কি করি ? কি করি ? ....ভাবতে ভাবতে মনে হলো , মাছের এই তেল টুকু দিয়ে যদি পাঁচমিশালি একটা সবজি পদ রান্না করি , তবে গরম ভাতে ..প্রথম পাত ও বেশ জমে উঠবে |


দুপুরে তো কম বেশি দু - তিনটে রান্না তো করতেই হবে | তাহলে ব্রেকফাস্ট এর কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা যাক | বাজারের সবজিগুলো গুছিয়ে রেখে , কাটা মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নুন - হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | মাছের তেলটুকুও ভালো করে ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | জলখাবার তৈরিতে মন লাগলাম | করতে করতে জলখাবার তৈরিও হয়ে গেলো , আর আমরা পেটপুরে প্রাতঃরাশ সেরেও ফেললাম |


এবার শুরু করবো দুপুরের রান্নাবান্না | প্রথমেই রাঁধবো মাছের - তেলে - পাঁচমিশালি - সবজি | সবজির মধ্যে নিলাম , খানিকটা পুঁই - শাক , একফালি পাকা - কুমড়ো , ৪-৫টা কচি কচি পটল , ৩টে কচি ঝিঙে , ৩টে মাঝারি দেশি পেঁয়াজ আর কয়েকটা কাঁচালঙ্কা | খুব অল্প মশলায় রান্না , কিন্তু খেতে ? খেতে অসা.............ধারণ | গরমে মুখ স্বাদে ভরিয়ে তুলতে , আর পেটে শান্তি আনতে এক দারুন খাবার (Macher - Teler - Chorchori) |


উপকরণ :-



  • মাছের তেল - অল্প খানিকটা , ভালো করে ধুয়ে নুন- হলুদ মাখানো

  • পুঁই শাক - ৫০০ গ্রাম , কেটেকুটে জলে ভেজানো

  • পাকা কুমড়ো - সরু একফালি , ৩০০- ৩৫০ গ্রামের মতো টুকরো টুকরো করে কেটে রাখা

  • কচি কচি পটল - ৪-৫টা , হালকা করে খোসা ছাড়িয়ে , লম্বালম্বি সরু সরু করে কেটে রাখা

  • কচি ঝিঙে - ৩টা - খোসা ছাড়িয়ে , লম্বা - লম্বা টুকরো করে কেটে রাখা

  • পেঁয়াজ - মাঝারি সাইজের ৩টা , খোসা ছাড়িয়ে কুচিয়ে রাখা


  • কাঁচালঙ্কা - ছোট ছোট ৮-৯টা , একটু করে চেরা , ২টো ফোরণে , বাকি গুলো প্রয়োজনমতো রান্নায় , ঝাল আসলে নিজের নিজের পছন্দমতো

  • পাঁচফোড়ন - ১ - ১.৫ চা চামচ

  • গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টো , একটু করে ফাটানো

  • হলুদগুঁড়ো - ১.৫ - ২ চা চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো


পদ্ধতি :-


প্রথমেই রাঁধবো মাছের - তেলে - পাঁচমিশালি - সবজি | তরকারি তো সকালের অন্য কাজ সারতে সারতে কেটে ফেলে , জলে ভিজিয়ে দিয়েছি | কারণ শাক সবজি একটু ভালো করে ধুয়ে নিতেই হয় | তবেই তো পোকা মাকড় বা ক্ষতিকারক কীটনাশক ...কোনো কিছুরই ভয় থাকে না | মাছের তেল ও ধুয়ে নুন - হলুদ মাখানো | যাহোক রান্না শুরু করে দিচ্ছি |


গ্যাসে কড়াই চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল ভালো মতো গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে , নুন - হলুদ মাখানো মাছের তেল কড়াইয়ের মধ্যে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে তেলটা অল্প ভেজেও নিলাম | তারপর ভাজা তেল কড়াই থেকে একটা পাত্রে তুলে রাখলাম | এবার গ্যাসে চাপানো , ওই কড়াইয়ের তেলের মধ্যেই , প্রয়োজনমতো অল্প একটু তেল দিলাম | তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে ফোরণে দিলাম , পাঁচফোড়ন , ২টো ফাটানো শুকনোলঙ্কা আর ২টো চেরা কাঁচালঙ্কা |



ফোরণের ভালো গন্ধ বের হতেই ছেড়ে দিলাম কুচানো পেঁয়াজগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজগুলো ভালো করে ভাজতে লাগলাম | পেঁয়াজে হালকা ভাজা ভাজা রং ধরে আসতেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম পটোলের টুকরোগুলো , একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম , কুমড়োর কাটা টুকরোগুলো | আবার আঁচ বাড়িয়ে শুরু করলাম নাড়াচাড়া | দিলাম ঝিঙের কেটে ধুয়ে রাখা টুকরোগুলো |


আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ের মধ্যে দিলাম , হলুদগুঁড়ো , প্রয়োজনমতো নুন , প্রয়োজনমতো চিনি | আঁচ বাড়িয়ে দু - একবার নেড়ে সব মিশিয়ে নিলাম |এবার কড়াইতে দিলাম ভেজে রাখা মাছের তেলটা | একটু নেড়েচেড়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম , জল ঝরানো কুচানো পুঁই - শাকগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ বেশ কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে ছেড়ে দিলাম প্রয়োজনমতো কয়েকটা চেরা কাঁচালঙ্কা | এইবার আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম |


আহা আহা রান্নার কি সুন্দর আর কি লোভনীয় গন্ধ !! জিভে জল ধরে রাখা তো বে.....শ মুশকিল !!যাহোক টেস্টি টেস্টি গন্ধ ছড়াতে থাকলো , আর রান্না ও মজতে থাকলো | রান্না কি হয়ে গেছে ? দেখিতো ! ঢাকা খুলে দেখি , রান্না থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে রান্না প্রায় মজেই গিয়েছে | সবজিগুলো ও মনে হচ্ছে নরম হয়ে গেছে অথচ বেশ গোটা গোটাও রয়েছে | রান্না একটু চেখে নিলাম | বাঃ ! বাঃ !! বাঃ !!! অপূর্ব ! অ.......পূর্ব লাগছে!! মন একেবারে ভরে যাচ্ছে | রান্না দেখতেও ভালো হয়েছে আর খেতেও বেশ ভালো | রান্নাটা করে খুবই ভালো লাগছে |


আঁচ বাড়িয়ে রান্নার রসা ঠিক করে নিলাম | গ্যাস বন্ধ করলাম আর রান্না একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে খাবার টেবিলে রেখে এলাম | একে একে অন্য সব রান্নাগুলো ও রেঁধে ফেলেছি | এখন সবাই আমরা লাঞ্চ টেবিলে | খুব খুব আনন্দ নিয়ে শুরু করলাম মধ্যাহ্ন - ভোজ | শুরুতেই পাতে গরম ভাতের সঙ্গে মাছের - তেলে - পাঁচমিশালি সবজি , খাবার মুখে তুলতেই আনন্দের রেশ টাও যেনো বেড়ে গেলো ....বেড়েই চললো | (Macher - Teler - Chorchori) | খাওয়া চললো এগিয়ে , সঙ্গে সঙ্গে চললো , অবশ্যই আমাদের শুরুর সেই অনেক অনেক আনন্দ ও ..............


আনন্দে থাকুন | ভালো খান , ভালো থাকুন , আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন |

Comments


bottom of page