top of page

ট্যাংরা - মাছের - বেগুন - ঝোল (Tangra Macher Begun Jhol)

ree


মাছ - প্রিয় বাঙালির খুব প্রিয় একটি মাছ , ট্যাংরা মাছ | ঘরে ঘরে এই মাছটির পরিচিতি তো আছেই , প্রচুর চাহিদাও আছে | আমরা , বাঙালিরা স্বাদে ভরপুর ছোট মাছটি পাতে দেখতে পেলেই বেজায় খুশি হই | খুব ছোট ছোট ট্যাংরা স্বাদে যেমন অপূর্ব , বড়ো সাইজের ট্যাংরাও স্বাদে-গুনে অতুলনীয় !!


ছোট - বড়ো ট্যাংরা প্রায় সারা বছরই বাজারে ঘোরা - ফেরা করে | আর ইচ্ছে হলেই , যে বাজারের থলি পছন্দ হয় , তাতে ঢুকে পরে পৌঁছে যায় আমাদের বাড়ি বাড়ি | তবে বর্ষাকালে যে পেটে ডিমভরা ট্যাংরাগুলো দেখতে পাওয়া যায় , আমার কিন্তু সেই ট্যাংরার , যে কোনো ধরণের মেনুই খুব ভালো লাগে | বর্ষার সিজিনে , আমার রান্নাঘরে আজ সেইরকমই পেটে ডিমভরা কিছু মাঝারি সাইজের ট্যাংরা এসে উপস্থিত | আমায় যেন বলছে , '' কি রে , রেঁধে ফেল , আমাদের রেঁধে ফেল '' | রেঁধে খেয়ে ফেল !



রেঁধে তো ..........ফেলবোই | ভাবছি ,কি মেনু রাঁধি , কি মেনু রাঁধি !! হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো , আজ ট্যাংরা মাছের ধনেপাতা ছেটানো ঝোল রাঁধলে কেমন হয় , আর ঝোলে থাকবে লম্বা লম্বা কয়েকটা বেগুন |মানে '' ট্যাংরা - মাছের - বেগুন - ঝোল '' | ধনেপাতা ছেটানো এই ঝোলটা , গরম গরম ভাতের সঙ্গে খেতে যে কতটা ভালো লাগে , তা মুখে বলে বোঝাতে পারবো না | বুঝতে গেলে খেতে হবে | আর তার জন্য অবশ্যই রাঁধতেও হবে | খুবই সহজ রান্না | অল্প মশলায় তৈরি , অথচ খেতে অপূর্ব , এক রান্না (Tangra Macher Begun Jhol)!! তাই , তোমরাও রেঁধে ফেল আর খেয়ে ফেল | দেখবে খুব.... খুবই খু.....বই ভালো লাগবে |


উপকরণ :-

ree
  • ট্যাংরা মাছ - ৫০০ গ্রাম , মাঝারি সাইজের , পেটে ডিমভরা , কেটেকুটে পরিষ্কার করে নুন - হলুদ মাখানো

  • বেগুন - ৩টি , মাঝারি সাইজের , লম্বা লম্বা পাতলা পাতলা করে কেটে নিয়ে , জলে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা

  • রসুন - ৮-৯ কোয়া , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে , কুচিয়ে রাখা

  • কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টা , লম্বালম্বি চিরে রাখা

  • ধনেপাতা - ১ কাপ মতো , কুচিয়ে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখা

  • পেঁয়াজ - ৩টি ছোট সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে , মিহি করে কুচিয়ে রাখা

  • পাঁচফোড়ন - ১ চা চামচ

  • হলুদগুঁড়ো - ২-৩ চা চামচ

  • জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ

  • লাল লংকার গুঁড়ো - ২-৩ চামচ , অবশ্যই ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - স্বাদ বাড়াতে আর রঙে চমক আনতে কয়েকদানা

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো



পদ্ধতি :-


আজকের দুপুরের জন্য প্রথম মেনুটি রাঁধবো , '' ট্যাংরা - মাছের - বেগুন - ঝোল '' | বর্ষাকালের , ডিমভরা এই মাঝারি সাইজের মাছগুলো দিয়ে রান্না করা মাছের ঝোল এক দারুন স্বাদে ভরপুর হয় | বাইরে বৃষ্টিভেজা দিন , আর টেবিলে গরম ভাতের সাথে ডিমভরা ট্যাংরামাছের গরম গরম পাতলা ঝোল ! ! মন যেনো বলে উঠবে , আহা হা হা , অনেকদিন বাদে ....এক চেনা স্বাদ !! সত্যি সত্যিই , কচি কচি ধনে পাতা ছেটানো , বর্ষার এই মাছের এই ঝোলটা , শুধু যেন বর্ষার দুপুরের জন্যই |


ree

যাহোক রান্না শুরু করে দিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো তেল | তেল খুব ভালো মতো গরম হয়ে উঠলেই , আঁচ কমিয়ে কিছু নুন - হলুদ আর সর্ষের তেল মাখানো ট্যাংরামাছ কড়াইতে গরম তেলে ছেড়ে দিলাম | | ট্যাংরামাছ একটু বেশি ই ফাটে | তাই তেল মাখিয়ে নিয়েছি | তেল মাখানো মাছ ফাটে কম | হালকা ঢাকা একটা রেখেছি |

ree

আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ট্যাংরামাছগুলো কড়া করে ভেজে তুলে নিলাম | আবার কয়েকটা মাছ ছেড়ে দিলাম কড়াইয়ের তেলের মধ্যে | আবার শুরু করলাম আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছভাজা | সব মাছ ভেজে নিলাম | এইবার কড়াইয়ের ওই তেলের মধ্যেই ছেড়ে দিলাম , জল ঝরানো বেগুনের টুকরোগুলো | দিলাম এ...ক চিমটে হলুদগুঁড়ো , এ....ক চিমটে নুন আর দু - এক দানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে বেগুনের টুকরোগুলো ও হালকা মুচমুচ করে ভেজে তুলে রাখলাম |


ree

এইবার কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে , প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | গ্যাসের আঁচটা দিলাম বাড়িয়ে | তেল গরম হয়ে উঠলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে তেলে ছেড়ে দিলাম পাঁচফোড়ন আর কয়েকটা চেরা কাঁচালঙ্কা | দু - একবার নেড়ে নিয়ে কড়াইয়ের মধ্যে দিলাম পেঁয়াজ আর রসুনের কুচানো টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত সুন্দর করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | পেঁয়াজকুচিতে হালকা বাদামি রং ধরে আসতেই , আঁচ কম রেখে ভাজা পেঁয়াজ - রসুনের মধ্যে দিলাম , অল্প হলুদগুঁড়ো , জিরেগুঁড়ো আর লাল লঙ্কারগুঁড়ো | দিলাম প্রয়োজনমতো নুন আর কয়েকদানা চিনি |

ree



দু - একবার নেড়েচেড়ে নিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম , ঝোলের পরিমান ভেবে নিয়ে জল | বেশি আঁচে ঝোল ফুটতে শুরু করলো | কড়াইতে ঝোলের মধ্যে দিয়ে দিলাম ভেজে রাখা ট্যাংরামাছ গুলো | কয়েকবার বেশি আঁচে ফোটার পর , আঁচ কমিয়ে রান্না হতে দিলাম | সুন্দর এক লোভনীয় গন্ধে তো চারিদিকটা মো মো করছে !!গন্ধেই যেন খিদে পেয়ে যাচ্ছে !! রান্না প্রায় অনেকটাই হয়ে এসেছে | এবার আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের মধ্যে দিয়ে দিলাম ভেজে রাখা মুচমুচে বেগুনের টুকরোগুলো |


ree

বেশি আঁচে মাছ আর বেগুন সমেত ঝোল ফুটছে | ঝোলের পরিমান ঠিকঠাক হয়ে এসেছে মনে হতেই , রান্না একটু চেখে নিলাম | বাঃ ! বাঃ ! কি অপূর্ব স্বাদেরই না হয়েছে !! তবে শুধু স্বাদে নয় , চারিদিক ভরে গেছে , মন ভালো করা এক সুন্দর গন্ধে | রান্না হয়ে গেছে | এবার কুচানো ধনেপাতা ঝোলের উপর ছড়িয়ে দিলাম | খুন্তি দিয়ে হালকা হাতে নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম | রান্নায় দিলাম ঢাকা | ধনেপাতার স্বাদে গন্ধে ঝোল মজে উঠুক | ঢাকা খুলবো দুপুরের টেবিলে (Tangra Macher Begun Jhol)|

ree




বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পরেই চলেছে | সবাই আমরা চলে এসেছি খাওয়ার টেবিলে | খাওয়ার সময় তো হয়েইছে , আর সত্য়ি বলতে কি , রান্নার মন ভালো করা গন্ধে , খিদে যেন অনেকটাই বেড়েও গেছে | যাহোক আমরা সবাই খাওয়া শুরু করলাম |


গরম গরম '' ট্যাংরা - মাছের - বেগুন - ঝোল '' আর গরম গরম ভাত | খাওয়ার আমেজ , সঙ্গে বৃষ্টির আমেজ | আহা হা হা , বড়োই ভালো লাগছিলো , বড়োই ভালো ...................আর ঝোল - ভাত খেয়ে দেয়ে , অনেক অনেক তৃপ্তির আনন্দে আমরা সবাই খুশি .......................................


আপনারাও খুব খুশিতে থাকুন | থাকুন অনেক অনেক আনন্দে | অনেক মজা করে ভালো ভালো খান | আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন |

Comments


bottom of page