top of page
Writer's pictureKaveri Nandi

রসা - রসা - সোয়াচাঙ্ক



কাল রাতে বিছানায় শুয়ে শুধুই এপাশ ওপাশ করছিলাম | দমবন্ধ গরমে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না | ভালো লাগছিলো না | হ.........ঠাৎ মনে হলো বাইরে বোধহয় খুব জোরে জোরে হাওয়া বইছে | বিছানা ছেড়ে উঠে জানলার পাল্লা বন্ধ করতে গিয়ে দেখি , ঝড় উঠেছে | ভালোই হয়েছে বাবাঃ | আর পারছিলামই না | ঝড় উঠতে দেখে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লো | জানালার পাল্লা গুলো বন্ধ করে , আনন্দ আনন্দ মনে বিছানায় শুয়েই , কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি | ঘুম ! গভী...........র ঘুম !!


সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি মুষলধারে বৃষ্টি ! ! গরম একদম নেই | রাস্তাঘাট জলে থই থই করছে | নাঃ আজ বোধহয় আর বাজারে গিয়ে লাভ হবে না | পুরো বাজারই বসবে কিনা সন্দেহ ! ঠিক আছে আজ ঘরে মজুত উপকরণ দিয়েই কেল্লাফতে হয়ে যাক | দেখি !! ....ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম | এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ভাবলাম , উপকরণ হিসাবে কি ........ই নেওয়া যায় |



ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরের উপরের দিকের তাকে সোয়াচাঙ্কের প্যাকেট টার দিকে চোখ পড়লো | বাঃ রে ! তাই তো !! আজ একটু রসালো রসালো করে সোয়াচাঙ্কের মেনু রাঁধা যেতেই পারে | গরম ভাতে পাতে পাতে জমে তো যাবেই যাবে | অনেকদিন তো সোয়াচাঙ্ক এর কোনো মেনুই রান্না করা ও হয়নি | আর সোয়াচাঙ্কের যে কোনো মেনুই আমাদের বাড়ির সবারই ভীষণ ভীষণ পছন্দ | তবে আমাদের বাড়ির সবার মধ্যে আমি ই বোধহয় সোয়াচাঙ্ক একটু বেশি ই পছন্দ করি | তাই আনন্দটাও আমারই বোধহয় সবচাইতে বেশি |


এদিকে অনেকদিন বাদে অসহ্য গরমের দাবাদহের পর , বৃষ্টি পেয়ে বাড়ির সব্বাই তো আনন্দে চেঁচামেচি - লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে , কেউ গান করছে , কেউ আবার আনন্দে কোমর দোলাচ্ছে | যেন হঠাৎ এক উৎসবের আমেজ | আমার ও খুব খুব আনন্দ হচ্ছে | সবাইকে ডিমটোস্ট আর চা দিয়ে সকালের জলখাবারের কাজ ভালোকরেই শেষ করলাম | ডিম্ আর পাউরুটি , ভাগ্যিস দুটোই বাড়িতে মজুত ছিল | আসলে এ দুটো এমন উপকরণ , যেগুলি প্রায় অনেক বাড়িতেই মজুত থাকে |


এবার তৈরি করবো সোয়াচাঙ্কের মেনু | সোয়াচাঙ্ক প্রোটিনে ভরা এক দারুন রান্নার উপকরণ |এখন তো উঠতে বসতে সবার মুখে মুখে একটা কথা প্রায় শোনা যায়, ইমিউনিটি বাড়াও আর ইমিউনিটি বাড়াও | আর এই মহান কাজটি খুব দক্ষ ভাবেই সেরে ফেলে আমাদের পছন্দের সোয়াচাঙ্ক | চটজলদি এনার্জি আনতে চাও ? সোয়াচাঙ্ক খাও !! তাড়াতাড়ি বাচ্চাদের বেড়ে তুলতে চাও ? অবশ্যই খাবারে সোয়াচাঙ্ক দাও !! ক্লান্তি দূর করতে চাও ? পাতে সোয়াচাঙ্ক নাও !! আর আজ ? .....মুখে স্বাদ বাড়াতে আমি রান্না করবো সবার প্রিয় সোয়াচাঙ্ক |


উপকরণ :-

  • সোয়াচাঙ্ক - ১০০ গ্রাম

  • আলু - মাঝারি সাইজের ৩টে , খোসা ছাড়িয়ে একটু ছোট ছোট ডুমো ডুমো করে কেটে , জলে ধুয়ে রাখা

  • পেঁয়াজ - মাঝারি সাইজের ৩টে , খোসা ছাড়িয়ে কুচিয়ে রাখা

  • রসুন - ৬-৭ কোয়া , ভালো করে খোসা ছাড়ানো

  • আদা - ইঞ্চি খানেক , খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা , বেটে দেওয়ার জন্য

  • কাঁচালঙ্কা - ৩-৫টা , মশলায় বেটে দেওয়ার জন্য

  • টমেটো - ১টা ছোট সাইজের , টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ধুয়ে রাখা

  • হলুদগুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ

  • জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ

  • লালঙ্কারগুঁড়ো - ১-২ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো

  • গরম মশলার গুঁড়ো - ১/২ - ১ চামচ

  • ঘি - ২ চামচ


আর একটা কথা , কড়াইতে গরম তেলে কুচানো পেঁয়াজ ছাড়ার সময় , ২টো ছোট ছোট সাইজের তেজপাতা , ২টো ফাটানো ছোট এলাচ , ২-৩টে লবঙ্গ , ছোট এক টুকরো দারচিনি দিয়ে দিলে তো রান্না আরো ও অসা..........ধারণ লাগবে | যদিও আজ আমি ফোরণে কিছু দিইনি |


পদ্ধতি :-


রান্না শুরু করছি | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে জল দিলাম | জল টগবগ করে ফুটে উঠতেই , সোয়াচাঙ্ক গুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | দু এক ফুট দিয়েই , কড়াই বন্ধ করে দিলাম | কিছুক্ষন গরম জলের মধ্যে সোয়াচাঙ্কের বড়িগুলো ভিজতে লাগলো | এইবার মিক্সিতে কাঁচালঙ্কা , আদাকুচি আর রসুনের কোয়াগুলো নিয়ে ভালো করে বেটে নিলাম | জল থেকে সোয়াচাঙ্কের বড়িগুলো জল ঝরিয়ে তুলে রাখলাম |


আবার গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে উঠলেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম কুচিয়ে রাখা পেঁয়াজ গুলো | বেশি আঁচে পেঁয়াজগুলো নাড়তে লাগলাম | পেঁয়াজ নরম হয়ে আসতেই , কড়াইতে দিয়েদিলাম জলে ধোওয়া আলুর টুকরোগুলো | ফের আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলু আর পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম | আলু - পেঁয়াজ ভাজার সুন্দর ভাজা ভাজা গন্ধ বের হতে শুরু করলেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম আদা - রসুন - কাঁচালঙ্কা বাটা |



কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম | দিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন , প্রয়োজনমতো চিনি আর টমেটোর টুকরোগুলো | দু - এক বার নেড়েচেড়ে নিয়ে দিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো হলুদগুঁড়ো | বেশি আঁচে সমস্ত সুন্দর করে কষতে কষতে দিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো জিরে গুঁড়ো আর প্রয়োজনমতো লাল-লংকার গুঁড়ো | দিয়ে দিলাম ১/২ চামচ মতো গরম মশলার গুঁড়ো আর ১ চামচ মতো ঘি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নিয়ে কষতে কষতে সুন্দর গন্ধে



চারিদিক ভরে উঠলো | কষা হয়ে গেছে মনে হতেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম রসার পরিমান ভেবে জল | ঝোল টগবগ টগবগ ফুটতে শুরু করতেই , আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিয়ে দিলাম |


আহাহা কি অপূর্ব গন্ধ ! গন্ধ পেতেই ,মন যেনো বলে চলেছে কখন খাবো কখন খাবো !! কিন্তু একী !! এ কেমন আমি !!সবাইয়ের খাওয়ার কথা না ভেবেই , শুধু শুধু আবোল তাবোল ভাবনা ভেবে চলেছি | তবে রান্নার গন্ধই কিন্তু বলে দিচ্ছে , আজ রান্না খুব ভালো হয়েছে | তাড়াতাড়ি ঢাকা খুলে , চট করে রান্না চেখে ফেললাম | সত্যি সত্যিই সুন্দর স্বাদে রান্না অসাধারণ হয়েছে |আঁচ বাড়িয়ে রান্নায় ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিলাম | রান্না নামানোর আগে রান্নায় আবার দিয়ে দিলাম ১/২ চামচ মতো গরম মশলার গুঁড়ো আর আরো ১ চামচ ঘি | ভালো করে নেড়ে চেড়ে দিলাম | রান্না সম্পূর্ণ | গ্যাস বন্ধ করলাম | এবার মজা করবো আমাদের লাঞ্চের টেবিলে |


কিন্তু !! কিন্তু খাবার টেবিলের এতো আনন্দে তো আমি একেবারে অভিভূত , উচ্ছস্বিত | গরম গরম সোয়া চাঙ্কের ঝোল দিয়ে গরম ভাত খাওয়া শুরু করেই সব্বাই একসঙ্গে বলে উঠলো | কি রেঁধেছে গো !! এক্কেবারে মাংস !! দারুন লাগছে ! দারুন স্বাদের হয়েছে !! ওহো হো অপূর্ব ! অপূ.....র্ব !! আর একটু দাও তো ! আর একটু দাও ! মুখ তো ভরে গেলো অপূ.........র্ব স্বাদে !! শুনতে শুনতে আমার মন ও ভরে উঠলো অপূর্ব আনন্দে .....আর গুন্ গুন্ করেই চ ললো......... কি আনন্দ ....কি আনন্দ ..................( আমার চারিপাশে )


সব্বাই আনন্দে থাকুন | ভালো থাকুন | ভালো ভালো খান | আর অবশ্যই সুস্থ থাকুন |

8 views0 comments

Comments


bottom of page