আজ আমার রান্নাঘরে আমিষে রয়েছে ,কয়েকটা টাটকা বেলে মাছ। অনেকদিন বাদে বেলে মাছ রাঁধবো। দারুন মিষ্টি মাছ। স্বাদে খুবই টেস্টি টেস্টি। সর্ষে পোস্ত বাটায় বেলে মাছের ঝাল-- গরম ভাতে অসাধারণ।
এই বিশাল পৃথিবীতে শুধু মাছই কত রকমের। হাজার চেষ্টা করলেও সব মাছকে জানতে চিনতেও পারবো না।তবু বাঙালিদের যেহেতু মাছ খুবই প্রিয় ---কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি ---তাই জানিনা জানিনা করে অনেক মাছ চিনেও ফেলেছি।তাছাড়া জানার একটা প্রবল ইচ্ছাও রয়েছে। এই প্রজন্মের অনেক অনেক বাঙালি আছে ,যারা হাতে গোনা কয়েকটি মাছ ছাড়া অন্যদের নামই জানে না ,চেনা তো অনেক অনেক দূরের কথা।
ব্যস্ত জীবনে এই পরিবর্তন আমাদের সবাইকে মেনে নিতেই হবে। নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে ,নিজেকে নতুনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু পুরানোকে সরিয়ে দেওয়াও চলবে না। নতুন পুরানোর সেতু যেন শক্ত থাকে। তবেই তো সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাওয়া যাবে। যদিও নতুন প্রজন্ম বইয়ের পাতায় কিছু মাছের নাম শুনেছে কিন্তু চোখে কখনো দেখতে পায়নি । গ্রামে গঞ্জে কিন্তু এখনো অন্য ছবি। বইয়ের পাতায় চেনা না হলেও ,রোজকার জীবনে নানা ধরণের মাছের সঙ্গে গ্রামে গঞ্জের মানুষজনের খুবই পরিচিতি ।বলতে গেলে নানাপ্রকার মাছ যেন তাদের রোজকার সঙ্গী।গামছা দিয়ে স্নানের ঘাটে ছোট ছোট মাছ ধরা, বড়ো ছোট সবারই যেন এক মজার খেলা।
আমি মাছ খুব ভালোবাসি। কেবলমাত্র খাবার জন্য নয়। নানা ধরণের টাটকা টাটকা মাছ দেখতে খুবই ভালো লাগে। আমার পরিবারে আমি নানা মাছের সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়েছি । এখনো সেই চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি । পরিবারের সবাই খুবই ভালো। নতুন নতুন মেনুতে তাদেরও খুব আগ্রহ।
যাহোক আজ দুপুরের আমিষ মেনু রাঁধবো টেস্টি টেস্টি করে বেলে মাছের সর্ষে - পোস্তোয় ঝাল। খেয়ে সব্বাই খুশি তো আমিও খুশি।
উপকরণ :-
বেলে মাছ - ১০-১২টি ( মাঝারি সাইজের,খোসা ছাড়িয়ে কেটে পরিষ্কার করা )
গোটা সর্ষে - ২-৩ চামচ ( জলে ভেজানো )
গোটা পোস্ত - ২-৩ চামচ ( জলে ভেজানো )
গোটা কাঁচালঙ্কা - ৫-৬টি
পাঁচফোড়ন - ১-১.৫ চামচ
হলুদগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ ( ইচ্ছা হলে দেবেন ,নতুবা নয় )
চিনি - প্রয়োজনমতো ( খুব সামান্য ,টেস্ট বাড়াতে ২-১ দানা )
নুন - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
প্রথমেই মাছগুলো বার বার জলে ধুয়ে নিয়ে নুন হলুদ মাখালাম। জল ঝরিয়ে ভেজা সর্ষে ,ভেজা পোস্ত আর ২-৩টি গোটা কাঁচালংন্কা মিক্সিতে নিয়ে মিহি করে বেটে নিলাম।
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল ভালোমতো গরম হলেই ,নুন হলুদ মাখানো বেলেমাছ গুলো কড়া করে ভেজে নিলাম। এবার কড়াইয়ের ওই তেলের মধ্যেই আর একটু তেল দিয়ে ,দিলাম
পাঁচফোড়ন ,সর্ষে - পোস্ত বাটা ,২-১ দানা চিনি ,প্রয়োজনমতো নুন ,১-১.৫ চামচ হলুদ ,অল্প লাল লঙ্কাগুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ নাড়তে লাগলাম।
মশলার জল শুকিয়ে তেল বেরিয়ে এলে ,রসার পরিমান ভেবে জল দিলাম। বেশি আঁচে ঝোল ফুটে উঠতেই ,ভাজা বেলেমাছ গুলো ঝোলের মধ্যে দিয়ে দিলাম। বেশি আঁচে ২-১ বার ফুটিয়ে নিয়ে ,আঁচ কমিয়ে রসাতে মাছগুলো মজতে দিলাম।
একটু পরে রান্নার স্বাদ চেখে নিয়ে ,গোটা বাকি কাঁচালঙ্কা গুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে সর্ষে - পোস্ত বাটা আর বেলেমাছ গুলো মাখো মাখো করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম। মিষ্টি মাছের মিষ্টি স্বাদে সর্ষে - পোস্তর ঝাল টেস্টি টেস্টি হয়ে উঠেছে। খুব ভালো লাগলো। মনে হলো সবাই খেয়ে খুশি হবে তো ?
দুপুরে খাবার টেবিলে চুপচাপ খাবার পরিবেশন করতে শুরু করলাম। খাবার পাতের শেষ মেনু সর্ষে - পোস্ত বাটায় বেলে মাছ। ওহহো ! দারুন ! কি সুন্দর খেতে হয়েছে ! আহাহা ! মুখ অপূর্ব স্বাদে ভরে গেলো গো। সবার কথায় মনে বেশ স্বস্তি পেলাম। পেলাম অনেক অনেক খুশি আর আনন্দ।
খুশিতে থাকুন ,আনন্দে থাকুন অবশ্যই খুব ভালো থাকুন।
Comments