বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর নদে এলো বান ............সেই ছোট্ট বেলায় বৃষ্টি এলেই ...নেচে নেচে এই কবিতাটাই বলতাম | বৃষ্টি ভালো লাগে .....ভালো তো লাগবেই | বৃষ্টি যে ভীষণ ভীষণই দরকার | গ্রীষ্মের প্রখর দাবাদহের পর ...একটু শরীর মন জুড়াতে বৃষ্টির তো দরকার আছেই | শুকিয়ে যাওয়া পুকুর ভরে উঠতে ,বৃষ্টির প্রয়োজন তো আছেই | প্রখর তাপে দগ্ধ গাছপালাগুলোর সবুজ হাসি আনতে বৃষ্টির আসাটাতো ভীষণই দরকার | মাটি ভিজে নানা সবুজ ফসলে ভরে উঠতে ...সবার আগে বৃষ্টির দরকার | কিন্তু বন্যা !...বন্যাকে যে বড়োই ভয় লাগে | বাড়ি - হারা ,ঘর - হারা ,জমি - হারা ........কারুর কথা ভাবতে ইচ্ছেই --- করে না ....আমি তো ঘরে বসে বৃষ্টি দেখছি ...কিন্তু যাদের মাথার উপর পলকা ছাদ বা ছাদ নেই ....তাদের ও কিন্তু বৃষ্টিকে আহ্বান জানাতে হয় | আমাদের সব্বার বাঁচার জন্যই তো বর্ষাকালের দরকার | আর বর্ষা মানেই তো বৃষ্টি ........|
পলকা ছাদের নিচে ..নদীর ধারে ...বেড়ার ঘরে থাকা ..এমনই একজন আমাদের মাছওয়ালা মাসি | এতো বৃষ্টির মধ্যেও কোনো ক্লান্তি বা বিরক্তি নেই | নদী থেকে কিছু টাটকা মাছ পেয়ে , চলে এসেছে -মাছের বাজারে | কয়েক রকমের মাছের মধ্যে রয়েছে ,একটা স্পেশাল ধরণের মাছ ...মাঝারি সাইজের ভীষণ টাটকা কয়েকটা ভোলা -ভেটকি | মাছগুলোর গায়ে কেমন যেনো লালচে লালচে আভা |
মাছগুলো দেখে অনেকেই যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো |একেবারে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিলো | মাসি আমাদের অনেকদিন ধরেই চেনে আর জানেও যে আমরা বাড়ির সবাই নানা ধরণের মাছ খেতে ভালোবাসি | আর তাই ওই কাড়াকাড়ির মধ্যেই একটা ভোলা - ভেটকি নিয়ে মাসি ....আমাদের মাছের ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো | .....ভালোবাসা কত অদ্ভুত হয় ...তাই না ?....আর ভালোবাসা পাওয়াটাও তো অনেক বড়ো আশীর্ব্বাদ ..... তাই না ?
ভোলা - ভেটকি এক দারুন দারুন মাছ | যারা এই মাছ পছন্দ করেন ,তারাই জানেন এই এক কাঁটার মাছ টি কতো কতো মিষ্টি স্বাদের আর কি ভীষণ নরম | এই মাছটির কাঁটাটিও খুবই নরম আর রসালো | বড়োই উপকারী এই ভোলা - ভেটকি | হাড়ের গঠন মজবুত আর শক্তিশালী করতে ....ছোট - বড়ো সবার জন্যই এই মাছ তুলনাহীন | আর তাছাড়া এক কাঁটার এই মাছটি , ছোট - বড়ো সবাই খুব পছন্দ ও করে আর তাইতো আমাদের রান্নাঘরে মাঝে - মধ্যে এই মাছের উপস্থিতি ... আমাদের জন্য তো ভালোই , আমাদের সংসারের সব্বার জন্যও খুবই ভালো |
টাটকা টাটকা ভোলা - ভেটকি দেখে তো আমি ভীষণ খুশি | আর ভেবেই নিলাম ,আমার এই খুশি সবার মনে পৌঁছে দিতেই ,আজ দুপুরের মেনুতে রাঁধবো খুব টেস্টি টেস্টি আর চটপটা স্বাদে ভরা ...সর্ষে - পোস্তোয় ভোলা ভেটকি | গরম ভাতে শুধুই অপূর্ব বলবোনা ....স্বাদে চমক আনতেও অতুলনীয় | ভাবতে ভাবতে জলে ভিজিয়ে দিলাম ১-১.৫ চামোচের মতো গোটা সর্ষে আর ২-৩ চামচের মতো পোস্ত | মাছ ভালো করে পরিষ্কার করে ,জলে ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | এখনো তো অনেক কাজ বাকি | সব সেরে তবেই তো রান্নাঘরের দিকে এগোবো দুপুরের মেনুগুলো রাঁধতে..........................
সময় এগিয়ে চললো আর সব কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরেও নিলাম | মন যে পরে রয়েছে ...সর্ষে - পোস্তোয় টেস্টি টেস্টি মাছ রান্নার দিকে আর তাইতো ..... রান্নাঘরে পৌঁছেই শুরু করে দিলাম ভোলা - ভেটকির রান্না ........
উপকরণ :-
ভোলা ভেটকি - ৬-৭ টুকরো ,ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ,নুন- হলুদ মাখানো
গোটা সর্ষে - ১- ১.৫ চামচের মতো ,জলে ভেজানো
পোস্ত - ২-৩ চামচের মতো ,জলে ভেজানো
কাঁচালঙ্কা - ১০-১২টা ,২টি ফোরণের জন্য ,৪-৫টি সর্ষে - পোস্ত বাটায় ,৪-৫টি গোটা গোটা রান্নায়
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টি ,একটু করে ফাটানো ,ফোরণের জন্যে
পাঁচফোড়ন - ১/২ চামচের মতো , রান্নায় একটু চটপটা স্বাদ আনতে
হলুদ গুঁড়ো - ১- ১.৫ চামচ
লালঙ্কাগুঁড়ো - ১/২ চামচের মতো ,রান্নায় সুন্দর রং ,আর স্বাদিষ্ট স্বাদের জন্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - কয়েকটা দানা ,রান্নায় সুন্দর রঙের আভা আনতে আর স্বাদে একটু চমক আনতে
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো , সর্ষে ,পোস্তর যে কোনো রান্নাই ,সর্ষের তেলেই বেশি জমে ওঠে
পদ্ধতি :-
প্রথমেই মিক্সিতে নিয়ে নিলাম ,জল ঝরানো সর্ষে ,জল ঝরানো পোস্ত ,২-৩ টি কাঁচালঙ্কা আর এক চিমটে নুন | মি ....হি... করে সর্ষে - পোস্ত বেটে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল খুব ভালো মতো গরম হলে ,আঁচ কমিয়ে ২-৩টি মাছের টুকরো কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ,বেশ কড়া করেই মাছ ভেজে তুলে নিলাম | বাকি মাছের টুকরোগুলো সব এইভাবেই ভেজে ফেললাম |
এবার কড়াইয়ের ওই মাছভাজার তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিয়ে দিলাম | তেল গরম হলে ,আঁচ কমিয়ে একে একে ফোরণে দিলাম ,পাঁচফোড়ন ,ফাটানো শুনলঙ্কা ,ফাটানো কাঁচালঙ্কা | একবার নেড়ে নিয়েই ,আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের তেলের মধ্যে দিলাম ...সর্ষে - পোস্ত বাটা আর একটু মিক্সি ধোয়া জল ,কারণ মিক্সিতে খানিকটা সর্ষে - পোস্ত বাটা লেগে ছিল যে |এরপর কড়াইয়ের সর্ষে - পোস্ত মিশ্রনের মধ্যে দিলাম একচিমটে হলুদ গুঁড়ো ,১/২ চামচ লাল লঙ্কাগুঁড়ো , কয়েকটা চিনির দানা আর প্রয়োজনমতো নুন |
আঁচ বাড়িয়ে সমস্ত ভালো করে নাড়তে লাগলাম | সর্ষে - পোস্তর মিশ্রনের এক মনকাড়া গন্ধ | আহা.....আ........হা ....কি সুন্দর ! ....কি সুন্দর ! সর্ষে - পোস্তর মিশ্রণ থেকে জল শুকিয়ে ,তেল পুচ - পুচ করে বার হতে শুরু হলেই ,কড়াইতে দিলাম রসার পরিমান ভেবে জল | বেশি আঁচে রসা টগবগ টগবগ করে ফুটে উঠলে ,কড়াইতে দিয়ে দিলাম .....কড়া করে ভেজে রাখা মাছের টুকরোগুলো |
বেশি আঁচে রান্না ফুটে মাখো মাখো হয়ে এলেই ,আঁচ কমিয়ে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | বাঃ....দারুন খেতে হয়েছে তো !!!........ নিজের রান্নায় যেনো নিজেই মুগ্ধ | সর্ষে আর পোস্ত দুটোই যে খুব মুখরোচক উপকরণ | যে কোনো রান্নায় দিলেই ,রান্নার স্বাদ অনেক অনেক বেড়ে যায় | আর আমাদের রান্নার উপকরণ সর্ষে ,পোস্তর সঙ্গে রয়েছে মিষ্টি স্বাদে ভরা ভোলা - ভেটকি | সর্ষে - পোস্তোয় এই মাছ কতটা টেস্টি টেস্টি হবে ,সেটা বোধহয় মুখে আর না বললেও ...বোঝা তো যাবেই যাবে |
একে একে দুপুরের সব রান্না শেষ | আমরা সবাই খাবার টেবিলে | খুশি খুশি তে শুরু হলো খাওয়ার প্রথম পাত | কিন্তু ....শেষ পাতে রান্নার স্বাদে আর চমকে সবাই যেনো আনন্দে ডগমগ .......আহ্লাদে মাখো মাখো | দেখেই বোঝা যাচ্ছে ......গরম গরম ভাতে ...চটপটা আর টেস্টি টেস্টি সর্ষে - পোস্তোয় ভোলা -ভেটকির স্বাদে ....সবার মন প্রাণ যেন তৃপ্তিতে - তৃপ্তিতে ভরে গেছে | আর সবার এই খুশির বহরে .....আমিও অনেক অনেক খুশি |
খুশিতে থাকুন ,ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন |
Bình luận