গরম গরম লুচি আর সাদা আলুর তরকারি দিয়ে জমিয়ে সবাই মিলে ,সকালের জলখাবারটা শেষ করছি ,হঠাৎ মনে হলো বাজারে কি কি এসেছে ,তা তো আজ দেখা হয়নি ..........আর দুপুরের মেনুর কথাও তো আজ ভাবা হয়নি........! তাড়াতাড়ি জলখাবারের পাট চুকিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম .....বাজারে কি কি এলো তা দেখতে |.......কিন্তু লেজের মতো বাজারের থলি থেকে ওগুলো কি বেরিয়ে আছে ? ....কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম ,প্রায় ১ কিলো মতো ....কচি কচি সবুজ সবুজ চিচিঙ্গা সবজি |
গ্রীষ্মকালের এক দারুন সবজি এই সবুজ সবুজ চিচিঙ্গা | খেতে তো অসাধারণই ,কিন্তু এই সবজীর উপকারিতা বোধহয় আমাদের চিন্তারই বাইরে | প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক গুনে সমৃদ্ধ এই সবজি ,আমাদের শরীরকে নানা ভাবে রোগমুক্ত রাখে | শরীরে বাড়ায় ইমিউনিটি | ফাইবারে ভরপুর ,তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখে | হাড়ের গঠন মজবুত করে | জলভরপুর এই সবজি ,গরমকালে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে | ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগের নিয়ন্ত্রণে ও এই সবজীর জুড়ি মেলা ভার | মোটকথা ভীষণ ভীষণ উপকারী | এই গরমে মাঝে মাঝে রান্নাঘরে এই সবজি আসতেই পারে |
চিচিঙ্গা তো আমরা নানা ভাবেই রান্না করি .......চিচিঙ্গার ঝাল ,চিচিঙ্গা ভাজা ,চিচিঙ্গা পোস্ত ,চিচিঙ্গা ছেঁচকি ......নানা ...নানাভাৱে | কিন্তু আজ আমার মাছের থলিতে রয়েছে ৩০০ -
৪০০ গ্রামের মতো ,তিড়িং বিড়িং করে লাফানো ,খানিকটা কুচোচিংড়ি | স্বাদে অসাধারণ ! যে রান্নায় দেবো ,সেই রান্নাই হয়ে উঠবে মুখরোচক | কিন্তু চিচিঙ্গা আর সঙ্গে কুচোচিংড়ি ! তাহলে কি মেনুর কথা ভেবেই বাজার ? কুচোচিংড়ি দিয়ে চিচিঙ্গা ......ওহো - হো - হো .....দুর্দান্ত টেস্টি টেস্টি এক মেনু |
ভাবতে ভাবতে দুপুরের প্রথম পাতের মেনুগুলো ঠিক করেই ফেললাম | গরম গরম ভাত ,সুস্বাদু পাতলা মুসুরির ডাল ,এক টুকরো লেবু ....আর ? আর সঙ্গে মুখরোচক মেনু .....কুচোচিংড়ি দিয়ে চিচিঙ্গা | গরমের আবহাওয়ায় ,দুপুরে এই মেনুগুলো যে কি ভীষণ ভালো লাগে ......মনে শরীরে যে কি শান্তি এনে দেয় ,......সেটা বোধহয় একমাত্র খাওয়ার পরেই বোঝা যায় |
ভাবলাম এখন তো অনেকই কাজ | যাই রান্নাঘরে ঢুকেই পরি..........
উপকরণ :-
চিচিঙ্গা - ১ কিলো
কুচোচিংড়ি - ৩০০ - ৩৫০ গ্রামের মতো
পেঁয়াজ - ৪টি ,মাঝারি সাইজের
কাঁচালঙ্কা - ১০-১২ টি ,লাল রঙের পাকা লঙ্কা হলেই ভালো ,সবুজ সবজিতে বোঝা যায় ,খেতে গিয়ে যেনো মুখে না পড়ে যায় , আর তাছাড়া ঝাল তো নিজের নিজের পছন্দমতোই
পাঁচফোড়ন - ১- ১.৫ চামচ
শুকনোলঙ্কা - ২-৩টি , একটু করে ফাটানো ,ফোরণের জন্য
হলুদগুঁড়ো - ২ চামচ মতো
নুন - রান্নার প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্নাঘরে ঢুকে প্রথমেই ,কুচোচিংড়িগুলো ভালো করে ছাড়িয়ে ,পরিষ্কার করে ,বার বার জলে ধুয়ে ,জল ঝরিয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | এবার চিচিঙ্গাগুলোর সবুজ সবুজ খোসা বটিতে চেঁছে নিয়ে , চিচিঙ্গা খুব মিহি করে কুচিয়ে ,জলে ধুয়ে ,জলঝড়িয়ে রাখলাম | পেঁয়াজ ৪ টি ও খুব মিহি করে কুচিয়ে নিলাম | পাকা লাল লংকার কয়েকটা অর্ধেক করে চিরে নিলাম ,আর কয়েকটা একটু করে চিরে রাখলাম |,
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে এলে ,আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম শুকনোলঙ্কা ,২টো কাঁচালঙ্কা ,পাঁচফোড়ন আর কুচানো পেঁয়াজগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম | পেঁয়াজ নরম হয়ে মজে যেতেই ,পেঁয়াজের মধ্যে দিলাম ,হলুদগুঁড়ো ,প্রয়োজনমতো নুন , স্বাদ বাড়াতে একটু চিনি আর কুচিয়ে রাখা ,জলঝরানো চিচিঙ্গাগুলো |আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে ,কড়াইয়ের মধ্যে দিলাম ,নুন আর হলুদ মাখানো কুচোচিংড়িগুলো |
এইবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ কয়েকবার ভালো করে নেড়েচেড়ে নিয়ে ,রান্নায় একটা ঢাকা দিয়ে দিলাম | আঁচ কমিয়ে রান্না মজতে দিলাম | কিছুক্ষনের মধ্যে চিচিঙ্গার সুন্দর গন্ধে আর কুচোচিংড়ির মিষ্টি গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠলো | আহা - আহা ....! কি সুন্দর ! কি সুন্দর ! রান্না করতে করতেই যেনো মন আনন্দে ভরে যাচ্ছে |
কিছুক্ষন পর ঢাকা খুলে দেখি ,রান্না বেশ মজে গেছে ,আর রান্না থেকে বেশ খানিকটা জল বেরিয়ে এসেছে | আঁচ বাড়িয়ে রান্না হতে দিলাম | জল একদম কমে গিয়ে তেল পুচ-পুচ করে বার হতে শুরু করতেই ,রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম | দিলাম বাকি কয়েকটা কাঁচালঙ্কা | ভালো করে নাড়াচাড়া করতে করতেই রান্না মাখো মাখো হয়ে এলো |রান্না থেকে খুব সুন্দর একটা ভাজা ভাজা গন্ধ বেরোতে লাগলো |এইবার গ্যাস বন্ধ করে রান্না একটা পাত্রে তুলে রাখলাম ,দুপুরের অপেক্ষায় |
দুপুরে আমরা সবাই খাবার টেবিলে | খাওয়ার শুরুটা এতো ভালো ,আর এতো টেস্টি টেস্টি হয়েছে ,যে সবাই খুশিতে উচ্ছ্বসিত | যেনো এক অনাবিল আনন্দে ভরে গেছে ,সবার মন ...সবার প্রাণ !
সব্বাই আনন্দে থাকুন ,সুস্থ থাকুন আর ভালো থাকুন |
Comments