সকালের জলখাবার তৈরি করতে করতেই দেখি ,রান্নাঘরে আজকের বাজার ও ঢুকে গেলো। জলখাবার তৈরি হয়ে গেলেই বাজারের থলি খুললাম। দেখি নানা শাক সবজির সঙ্গে আমিষে রয়েছে কিছুটা চিকেন। বুঝলাম সবার আজ চিকেনের কোনো মেনু চাই।
চিকেন ---প্রোটিনে ভরপুর ,খুবই প্রয়োজনীয় ,খুবই উপকারী এক রান্নার উপকরণ। যারা আমিষ খেতে পছন্দ করেন ,তারা বোধহয় সবাই -ই চিকেন খুব খুব পছন্দ করেন। শরীর সুস্থ রাখতে ,দুর্বলতা দূর করতে ,ইমিউনিটি বাড়াতে চিকেনের প্রয়োজন আছেই আছে। যাদের শারীরিক দুর্বলতা আছে ,যারা অনেক দিন রোগে ভুগে সুস্থ হতে চলেছেন ,তাদের ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েই থাকেন ,খাদ্যের মেনুতে চিকেনের যে কোনো হালকা মেনু অবশ্যই রাখতে।
গরম তো পরেই গেছে। এখন মোটামুটি সবাই ঠান্ডা ঠান্ডা ,একটু হালকা হালকা মেনুই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু শরীর ঠিক ঠাক ভাবে সুস্থ রাখতে মাঝে মাঝে সবই খাওয়া উচিত। তাই আজ আমি চিকেন তো রান্না করবোই ,তবে খুব হালকা করেই রাঁধবো চিকেনের - ঝোল। আমার বিশ্বাস সবার দুপুরের মেনুতে খুব ভালো লাগবে। একটু মুখের স্বাদও পাল্টাবে। সকলকে সকালের জলখাবার খাইয়ে দাইয়ে ,নিশ্চিন্তে চিকেনের ঝোল রাঁধার প্রস্তুতি শুরু করেই দিলাম।
উপকরণ :-
চিকেন - ৮০০ গ্রাম ( টুকরো টুকরো করে কাটা )
আলু - ৪-৫টি মাঝারি সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে ,মাঝামাঝি ২ টুকরো করে কাটা )
পেঁয়াজ - ৪-৫টি ছোট সাইজের ( মিহি করে কুচানো )
রসুন - ১টি ছোট সাইজের ( কোয়া গুলো ছাড়িয়ে রাখা )
কাঁচালঙ্কা - ১০-১২টি ( ঝাল নিজের নিজের পছন্দ মতো )
আদা - ইঞ্চিখানেক ( খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করা )
টমেটো - ১টি বড়ো সাইজের ( কুচানো
হলুদ - ২-৩ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ৪-৫ চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ ( যারা প্রয়োজন মনে করবেন না ,তারা অবশ্যই দেবেন না )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্বতি :-
চিকেনের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে নুন আর তেল মাখিয়ে রাখলাম। মিক্সিতে আদা ,রসুন,কাঁচালঙ্কা নিয়ে মিহি করে বেটে রাখলাম। কাটা আলুর টুকরো গুলো জলে ভিজিয়ে দিলাম। মাংসের ঝোলে আলুর ভূমিকা কিন্তু অসাধারণ। সাধারণত বাঙালিদের ক্ষেত্রে মাংসের ঝোলে আলু থাকবেই।গরম গরম মাংসের ঝোলের আলু ,গরম গরম ভাতের সঙ্গে কিন্তু সত্যিই অসাধারণ ......লাগে।
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হলে আলুর টুকরোগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম ,এক চিমটে নুন ,এক চিমটে চিনি ,আর এক চিমটে হলুদ। আলুর টুকরোগুলো রাঙা করে ভেজে তুলে রাখলাম। এখন কড়াইতে আর একটু প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল দিয়ে ,দিলাম পেঁয়াজের কুচানো টুকরোগুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ ভাজতে ভাজতে দিলাম ,আদা -রসুন -কাঁচালঙ্কা বাটা। আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের উপকরণ নাড়তে লাগলাম। মশলা ভাজার গন্ধ বেরোতেই ,সমস্ত চিকেন কড়াইতে দিয়ে দিলাম।দিলাম টমেটোর টুকরোগুলো। আঁচ বাড়িয়ে চিকেন নাড়তে নাড়তে দিতে থাকলাম ,হলুদ ,নুন ,কয়েকদানা চিনি।আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম। কিছুক্ষন বাদে আঁচ কমিয়ে দিলাম জিরেগুঁড়ো আর সামান্য লঙ্কাগুঁড়ো। এবার সমস্ত উপকরণ আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে কষতে শুরু করলাম।
এই রান্না করতে করতেই পাশের গ্যাস ওভেনে কম আঁচে কিছুটা জল চাপিয়েই দিয়েছিলাম।
জল অল্প অল্প গরম হচ্ছিল। মাংস কষার সুন্দর গন্ধ বেরোতে লাগলো। মাংস কষা থেকে তেল বেরোতে শুরু করলেই ঝোলের পরিমান ভেবে ,পাশের ওভেনে তৈরি হওয়া হালকা হালকা গরম জল মাংসের কড়াইতে দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে দিলাম। ঝোল টগবগ করে ফুটে উঠেছে ,এবার দিলাম ভাজা আলুর টুকরোগুলো। আরো কিছুক্ষন টগবগ করে ফোটার পরে আঁচ কমিয়ে ,হালকা করে একটা ঢাকা দিয়ে মাংসের ঝোল তৈরি হতে দিলাম।
কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে দেখে নিলাম ,মাংস ,আলু সেদ্ব হয়েছে কিনা। রান্নার স্বাদ ও দেখে নিলাম। মাংস রান্নার গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠেছে। সব কিছু ঠিক ঠাক হয়েছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে ,ঝোল ফুটিয়ে .....ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে ,গ্যাস বন্ধ করলাম। ঢাকা দিয়ে মাংসের ঝোল রেখে দিলাম।
দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই একসঙ্গেই বলে উঠলো ,আজ গরম গরম ভাত ,শুধু গরম গরম চিকেন -আলুর ঝোল দিয়েই খাবো। আর কিচ্ছু না। তবে চাটনি চললেও চলতে পারে। খাওয়াটা বড়োই আনন্দের,বড়োই উপভোগ্য হলো। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলো খুশি খুশি মনে। আমিও খুশি।
আপনারাও খুশিতে থাকুন ,ভালো থাকুন,আনন্দে থাকুন।
ความคิดเห็น