শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন ..........লাগলো নাচন ,লাগলো নাচন ............আমাদেরই মনে মনে | মনে মনে লেগেছে খুশির পরশ | তবে শুধু আমাদেরই মনে নয় , আকাশে খুশির পরশ , বাতাসে খুশির পরশ ,ঝলমল রোদে খুশির পরশ , মাটি - ধুলিকণাতে খুশির পরশ | চারিদিকে কেমন যেনো খুশি আর খুশি | বলে বোধহয় ঠিক বোঝানো যাবে না | শুধুই এক সুন্দর অনুভূতি ................| তবে যাই হোক না কেনো অবশে.......ষে আমাদের আদরের শীত এলো | একটু দেরি করে হলেও , শীত এসে গেলো | সবাই বেজায় খুশি | কিন্তু !!! ......কিন্তু শীত ঠিকঠাক সময়ে এলো না কেন ? বাহ্ রে , গরম যে নাছোড়বান্দা ...... যাবো না ....যাবো না .... যাবোই না | তবুও শীত কিন্তু এসেই গেলো | মানুষের মনে মনে খুশির ছোঁয়া | সারা বছর গরমের তীব্র ঝলসানির পর , শীতের শীতল পরশ টা যে বড়োই মধুর ,বড়োই সুন্দর আর বড়োই আরামের |
শীত মানেই খাওয়ায় আনন্দ ....শোয়ায় আনন্দ .....চারিদিকটা তাকিয়ে দেখায় আনন্দ | মানে মানে পুরোপুরি এক পিকনিকের আমেজ | আর তাইতো আমরা , সব বাঙালিরা এই সময়টার জন্য ,এই সব সুন্দর সুন্দর
মুহূর্ত গুলো উপভোগের জন্য প্রায় সারা বছরই অ..........ধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি | শারীরিক মানসিক স্বস্তি , আনন্দ থাকে বলেই তো , বাংলার শীত বাঙালিদের এতোখানি প্রিয় |
ক,দিন ধরেই খেয়াল করছি ,শীতের সুন্দর আমেজটা সারা শরীরে কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে ধরছে | সবার মুখগুলোতেও কেমন যেন মিষ্টি মিষ্টি সুখের আভাস | মন বলে উঠলো এই আমেজ আরো ও বেড়ে যাবে, যদি প্রতি পাতে পাতে রাখতে পারি মুখরোচক নানা খাবার দাবারের স্বাদ | আর তাইতো কাল ভেবেই রেখেছিলাম যে আজ
জলখাবারের প্লেটে থাকবে , ফুলকপির পরোটা | শীতের সকালের খুব খুব টেস্টি একটি প্রাতঃরাশ |
শীতকালে, 'গোবি কা পরাঠা' (Gobi ka Parantha) প্রতি বাড়িতে ই খুব কমন একটা পদ | খেতে তো খুবই ভালো হয় , আর সব্বাই খেতে পছন্দ ও করে | নতুন ওঠা ফুলকপি , বাজারে ছড়াছড়ি | কালই এনে রেখেছি | আর এনে রেখেছি আটা | আমি
আজ আটা দিয়ে ফুলকপির পরোটা বানাবো | ময়দা দিয়ে পরোটা বানালে খেতেতো দারুন হয়ই , কিন্তু আটা দিয়ে তৈরি পরোটাও খেতে খুবই টেস্টি টেস্টি হয় | রোজ তো ময়দার তৈরি নানাধরণের পরোটা খেয়েই থাকি | আজ না হয় উপকরণে আটাকেই বেছে নিলাম | আর একটি প্রধান উপকরণ ঘি | ময়ানে দেব ঘি | পরোটা ভাজাতেও দেব অল্প অল্প ঘি | খেতে আসবে দারুন মজা |
উপকরণ :-
ফুলকপি - ৩টে ছোট ছোট সাইজের
আটা - ৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রামের মতো
কাঁচালঙ্কা - ৮-১০ টা , ঝাল অবশ্যই নিজের নিজের পছন্দমতো
রসুন - ২-৩ কোয়া , ছাড়ানো
আদা - ইঞ্চি খানেক , ভালো করে ছাড়িয়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা
হলুদগুঁড়ো - ১/২ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ১/২ চামচ
লালঙ্কাগুঁড়ো - ১/২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - দিতেই হবে , প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
ঘি - প্রয়োজনমতো .....................আর ..............
পরোটার সঙ্গের উপকরণ --- টক দই , টমেটো সস আর লাল লংকার আচার |
পদ্ধতি :-
সকালের চা বিস্কিট সবাইকে খাইয়ে দিয়ে , রান্নাঘরে ঢুকলাম পরোটা তৈরি করতে | প্রথমেই ছোট ছোট সাইজের তিনটে কপির পাতাগুলো বাদ দিয়ে নিলাম | ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে , একটা বড়ো কড়াইয়ের মধ্যে গোটা কপিগুলো জলে ডুবন্ত অবস্থায় রেখে গ্যাসে চাপলাম | কড়াইয়ের জল টগবগ করে ফুটে উঠলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ের মুখে একটা ঢাকা দিয়ে , গোটা গোটা কপিগুলো মজতে দিলাম |
এইবার একটা পাত্রে প্রয়োজনমতো আটা নিয়ে , তার মধ্যে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন , ময়ানের জন্য প্রয়োজনমতো ঘি আর স্বাদ বাড়াতে আন্দাজমতো চিনি | আটার মধ্যে সব উপকরণ হাত দিয়ে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে লাগলাম | সব ভালো মতো মিশে গেছে মনে হতেই , জল দিয়ে মেখে নিয়ে আটার একটা মণ্ড তৈরি করে ফেললাম | বার বার
মেখে মণ্ড নরম আর মোলায়েম করে ফেললাম |
এবার মেখে নেওয়া নরম মণ্ডটিতে অল্প ঘি মাখিয়ে নিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রাখলাম | গ্যাসে চাপানো কড়াইয়ের ঢাকা খুলে দেখলাম , ফুলকপি মজে গেছে | গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | কড়াই থেকে সেদ্ধ কপিগুলো তুলে নিয়ে একটা পাত্রে রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে বার বার ধুয়ে নিলাম | মজে যাওয়া ফুলগুলো সেদ্ধ কপি থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটা পাত্রে রাখলাম | এরপর মিক্সিতে কয়েকটা কাঁচালঙ্কা , ২-৩ কোয়া রসুন আর অল্প খানিকটা আদা নিয়ে মিহি করে বেটে নিলাম |
যে পাত্রের মধ্যে ছাড়ানো ফুলগুলো ছিলো , সেই পাত্রের মধ্যে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন , প্রয়োজনমতো চিনি আর মিক্সিতে বেটে রাখা আদা - রসুন - কাঁচালংকার মিশ্রণ টি | আরো দিলাম ১/২ চামচ হলুদগুঁড়ো , ১/২ চামচ জিরেগুঁড়ো , ১/২ চামচ লাললঙ্কারগুঁড়ো | সমস্ত মিশ্রণ হাত দিয়ে ভালো করে মেখে মেখে মিশিয়ে নিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে ,দিলাম, প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল ঠিকমতো গরম হয়ে উঠতেই , কড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে
দিলাম , মেখে রাখা মিশ্রণটি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মিশ্রণ ভালোকরে নাড়াচাড়া করে ভেজে নিতে লাগলাম | ভাজা ভাজা এক সুন্দর গন্ধ বার হতে শুরু হলেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ের ভাজা ফুলকপির মিশ্রনে দিলাম , ২ চা চামচ ঘি |
ঘি সমেত মিশ্রণটি কয়েকবার নেড়ে নিয়ে চেখে দেখলাম |" বাহ্ !! দারুন টেস্টি টেস্টি লাগছে তো !!" তৈরি হয়ে গেলো ফুলকপির পুর | গ্যাস বন্ধ করে ভাজা পুর কড়াই থেকে একটা পাত্রে ঢেলে নিলাম | এবার তৈরি করবো ফুলকপির পরাঠা (Gobi ka Parantha) | মেখে রাখা নরম মন্ডথেকে একটু বড়ো বড়ো কয়েকটা লেচি তৈরি করে ফেললাম | একটা লেচি নিয়ে ভালো করে আটা মাখিয়ে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাটির মতো করে নিয়ে , তার মধ্যে প্রয়োজনমতো পুর ভরে নিলাম | বাটির মুখ বন্ধ
করে আবার তা লেচির আকারে নিয়ে এসে , চাকির উপরে রাখলাম | ময়দা ছিটিয়ে ছিটিয়ে হাত দিয়ে চেপে চেপে পুর ভরা লেচি বড়ো করতে লাগলাম | এবার বেলনা দিয়ে লেচি গোল পরোটার আকারে গড়ে ফেললাম |
গ্যাসে তাওয়া চাপিয়ে , তার মধ্যে বেলে রাখা পরোটা দিয়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পরোটা ভালোকরে ভেজে ফেললাম | ভাজা হয়ে গেছে মনে হতেই দিলাম ১ চা চামচ মতো ঘি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ঘি -এর মধ্যে পরোটা তাওয়ার উপর এপিঠ ওপিঠ করে ফেলে , একটা পাত্রে তুলে রাখলাম | দেখতে দেখতে সব পরোটাগুলোই ভাজা হয়ে গেলো | ....... আর এবার ??? এবার সবাই মিলে খুব মজা করে করে নাস্তা খাওয়ার পালা |
পরোটার সঙ্গের উপকরণ রেখেছি ,টক দই , টমেটো সস , লংকার আচার | যার যেটা খুশি হবে , সেটাই খাবে | প্রথমে ২টো করে পরোটা প্লেটে প্লেটে সবার কাছে এগিয়ে দিলাম | টেবিলের চারপাশে আমরা সবাই | শুরু হলো খাওয়া | কেউ নিলাম সস তো কেউ দই , কেউ কেউ আবার দই , সস ,আচার সবই জমিয়ে খেলো | মাঝে মাঝেই আবার আওয়াজ উঠছে , " ওঃ!! কি বানিয়েছো গো !! আর একটা হবে ?? .......সবার আছে তো ???.........|" নানা কথাতে , খুশিতে , হাসিতে আমাদের খাবার টেবিল দারুন জমে উঠলো | আমরা সব্বাই খুব খুব খুশি |
আপনারাও খুশিতে থাকুন | জমিয়ে শীতের নানা মেনু উপভোগ করুন | আর থাকুন অনেক অনেক সুস্থ , অনেক অনেক আনন্দে |
Comments