আজ আমার বাড়ির আমিষের মেনু লোটে মাছ। সবাই কিন্তু এই মাছের সঙ্গে পরিচিত নয়। দারুন উপকারী মাছ। গ্রাম বাংলার মানুষজন কিন্তু খুব জমিয়ে এই মাছ রান্না করে। আর জমিয়ে খায়ও। লোটে মাছ নিয়ে কথা বলতে বলতে ,কত রকম মাছের নাম শুনলাম ,যা আমার বাড়ির খুব কাছেই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমি অনেক মাছের নামই শুনিনি ! চোখে তো অবশ্যই দেখিনি। আসলে সব সময়ে সব কিছু জানা থাকে না। কিন্তু আমাদের ইচ্ছে থাকলে আমরা চিনে ফেলবোই।
ভিটামিন ডি আর ফসফরাস সমৃদ্ধ লোটে মাছ হাড়ের গঠনে ,হাড় মজবুত করতে দারুন উপকারী। এই মাছ শরীরে রক্তের পরিমান বাড়িয়ে ,রক্তাল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। ক্লান্তি দূর করতে ,স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ,শরীরে আয়োডিনের পরিমান সঠিক রাখতে এর গুরুত্ব অসীম। থাইরয়েডের রুগীর এক মহা ঔষধ। প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম ,ফসফরাস থাকার জন্য নানা ধরণের বাতের রোগ প্রতিরোধেও দারুন দারুন ভাবে সাহায্যও করে। তাই যদি আমরা ইচ্ছে করি ,ছোট - বড়ো সবার ভালোর জন্য মাঝে মাঝে আমাদের রান্নাঘরে এই লোটে মাছকে ঠাঁই দিতেই পারি। জমিয়ে রান্না .....আর তারপর খুব আনন্দের সঙ্গে .......জমিয়ে খাওয়া। রোগ নামক শত্রুকে একটু দূরে রাখার ......একটু চেষ্টা .......
আজ লোটে মাছ সুন্দর করে ভাজি ভাজি করবো। গরম ভাতে ...উফঃ ! দারুন জমে যাবে। একবার খেলেই মনে হবে ,আর একটু খাই ...আর একটু খাই ...আর একটু ...। এই মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার পর অন্য কিছু খেতে ইচ্ছেই করে না। তবুও শুরুতে একটা নিরামিষ পদ তো রাখতেই হবে। যাই রান্না শুরু করেই ফেলি .........
উপকরণ :-
লোটে মাছ - ১ কেজি
পেঁয়াজ - ৬টি একটু বড়ো সাইজের ( মিহি করে কুচানো )
রসুন - ১টি মাঝারি সাইজের ( মিহি করে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭ টি ( টুকরো টুকরো করা )
হলুদ - ১.৫-২ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ২-৩ চামচ ( নিজেদের পছন্দ মতো )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
লোটে মাছ ভালো করে ধুয়ে নিয়ে একটু নুন মাখালাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে অল্প তেল দিলাম। তেল গরম হতেই নুন মাখানো লোটে মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম। আঁচ কম করে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই নুন মাখানো লোটে মাছগুলো থেকে প্রচুর জল বেরোতে শুরু করলো। এবার আঁচ বাড়িয়ে
কড়াইয়ের জল শুকিয়ে নিলাম। জল শুকানো নরম হয়ে যাওয়া লোটে মাছ হালকা ভাবে একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম।
কড়াই পরিষ্কার করে গ্যাসে চাপলাম। প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই দিলাম কুচানো পেঁয়াজ ,কুচানো রসুন ,কয়েকটা কাঁচালংকার টুকরো। আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে ভাজতে লাগলাম। পেঁয়াজ একটু ভাজা ভাজা হতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম নুন ,অল্প চিনি ,হলুদের গুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম জল শুকানো লোটে মাছগুলো আর খানিকটা লাল লঙ্কাগুঁড়ো।
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত মিশ্রণ নাড়তে লাগলাম। রান্না থেকে সুন্দর ভাজা ভাজা গন্ধ বের হতে লাগলো। সমস্ত উপকরণ ভাজা ভাজা হয়ে গেছে মনে হতেই ,রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম। অসাধারণ ! খুব ভালো !..... ছিঃ! ছিঃ! খুবই লজ্জার কথা ,সবাইকে খাওয়ানোর আগেই আমার জিভেই জল চলে আসছে ....। রান্না চলে এলো দুপুরের খাবার টেবিলে।
এক ডাকেই সবাই খাবার টেবিলে উপস্থিত। সবাই মিলে খুব খুব আনন্দ করে ,মজা করে আমাদের মধ্যাহ্ন ভোজ সারলাম। সবাই খুশি আর তৃপ্তিতে ভরপুর। আমিও ..........
খুব সহজ রান্না। রাঁধুন। মজা করে খান। আর অনেক অনেক ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন ,আনন্দে থাকুন।
Comentários