বর্ষাকাল !...আষাঢ় মাস প্রায় শেষ হতে চলেছে | রথের উৎসব পার হয়ে গেলো | এখন তো মাঝে মাঝেই গুমোট গুমোট ভাব ...পরক্ষনেই ঝির ঝিরে বৃষ্টি | আমার ফ্ল্যাটটা উত্তর- পূর্ব মুখী | খুব আলোঝলমল খোলামেলা একটা ফ্ল্যাট | ব্যস্ত রাস্তার উপর ...অথচ সামনে গাছপালায় ভরা এক সুন্দর দৃশ্য | বিশেষ করে গ্রিলের বারান্দাটায় দাঁড়ালে মন কেমন যেনো এক ভালো লাগাতে ভরে ওঠে |
সবাই বলে শীতকালে উত্তরে হাওয়া | কিন্তু এই বর্ষা তেও দেখছি আমার বাড়িতে বে.. ...শ জোলো জোলো হাওয়ার ছোটাছুটি | আজ সকালে ঘুম ভেঙেই দেখছি ....কেমন এক সুন্দর আরামদায়ক আবহাওয়া | মাঝে মাঝে ঝম - ঝম করে বৃষ্টি ....হঠাৎ বৃষ্টি নেই ....আবার ঝম ঝম করে বৃষ্টি ......বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে খুব ভালো লাগছে ......|
সব কিছু উপভোগ করতে করতে সবার জন্য তৈরি করে চলেছি ...সকালের জলখাবার | হঠাৎ কাজের দিদি ঘর মুছতে মুছতে বলে উঠলো .....আজকের দিনে খিচুড়ি রান্না করতে হয় ...আর ঘরে বসে আয়েশ করে খেতে হয় ...কি বলো - দিদি ?.......
আনমনা মনে... হঠাৎ যেনো চমকের ঝলকানি |কথাটা তো বড়োই মনমতো বলেছে | আজ দুপুরের মেনুতে গরম গরম খিচুড়ি হলে তো বেশ হয় | দিদির কথাটা একেবারে লুফে নিলাম | আজ সবাই যখন বাড়িতে .........তখন আজ দুপুরের মেনুতে খিচুড়ি রাঁধছিই ....রাঁধছি | ভদ্রলোকের একটাই চিন্তা ....আর সেই চিন্তা টাই হবে শেষ কথা ..........|
সবাইকে জলখাবার খাইয়ে ,নিজে খেয়ে দেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ....টিভির সামনে বসে পড়লাম ''গোপালভার '.....দেখতে | ''গোপালভার ''দেখতে আমার খুব খুব ভালো লাগে | রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভা আলো করে থাকা শ্রীযুক্ত গোপাল ভাঁড় ...সত্যি আমাদের বাংলার গর্ব | তাঁর অসীম বুদ্ধির প্রসংশা বাংলার ঘরে ঘরে | দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলো .....নাঃ....আর দেরি করলে হবে না | এখন দুপুরের রান্নাটা শুরু না করলে....মধ্যাহ্ন ভোজে দেরি হয়ে যাবে | অতএব সব্বাই ''গোপালভার '' দেখুক ....আমি রান্নাঘরে চললাম .....দুপুরের জন্য মুখরোচক খিচুড়ি রান্না করতে | মুগ মুসুরে ফুলকপি টমেটো দিয়ে গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি |
উপকরণ :-
গোবিন্দভোগ চাল - ২ কাপ
মুগডাল - ১ কাপ
মুসুরডাল - ১ কাপ
ফুলকপি - ১টা ,মাঝারি সাইজের ,টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো
আলু - ২টি ,বড়ো সাইজের ,খোসা ছাড়িয়ে ,প্রত্যেকটা ৮ টুকরো করে কাটা
আদা - আদা বাটা ২-৩ চামচ
কাঁচালঙ্কা - গোটা গোটা ১০-১২টা
টমেটো - ১টা ,একটু বড়ো সাইজের ,লম্বা লম্বা - পাতলা পাতলা করে কাটা
গোটা শুকনো লঙ্কা - ৫-৬টি ,একটু করে ফাটানো
হলুদগুঁড়ো - ১-২ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লালঙ্কাগুঁড়ো - ১-২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - চিনি তো লাগবেই ,তবে ....প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
ঘি - ২-৩ চামচ
পদ্ধতি :-
সকালের দিকটা এতোই বৃষ্টিভেজা ছিল যে .....আজ আর কারুর বাজার যাওয়া হয়নি | ভেবে ছিলাম দুপুরে ডিমের ঝোল রাঁধবো | কিন্তু ...খিচুড়ির ভাবনা আসাতেই...ভাবলাম খিচুড়ির সঙ্গে দুপুরে গরম গরম ডিমেট ওমলেট বানাবো | যাইহোক ...খিচুড়ি রান্না শুরু করে দিলাম |
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হলে ,জলে ধোয়া আলুর টুকরো গুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলুর টুকরো গুলো নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | এবার দিলাম জল ঝরানো কপির টুকরোগুলো | দিলাম এক চিমটে হলুদ ,এক চিমটে নুন ,এক চিমটে চিনি |আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কয়েকবার নাড়াচাড়া করে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে আলু - কপি মজতে দিলাম | কিছুক্ষন বাদে বাদে ঢাকা খুলে ,কড়াইয়ের কপি আলু নেড়ে দিয়ে আবার ঢাকা দিয়ে মজিয়ে নিতে লাগলাম | কপি আর আলু নরম নরম হয়ে আসতেই ,গ্যাস বন্ধ করে কপি - আলু একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম |
এবার গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হলে শুকনোলঙ্কাগুলো কড়াইতে গরম তেলের মধ্যে ছেড়ে দিলাম | আঁচ কমিয়ে ,শুকনো লঙ্কা গুলো ভাজা ভাজা হয়ে আসতেই ,ভাজা লঙ্কাগুলো তেল থেকে তুলে রাখলাম | এখন এই লঙ্কাভাজা তেলের মধ্যে দিয়ে দিলাম ,জলে ধোয়া ,জল ঝরানো মুগডালগুলো | লঙ্কা ভাজা তেলে মুগডাল ভাজলে .... রান্নায় এক স্পেশাল স্বাদ আসে | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সুন্দর করে ডাল ভাজতে লাগলাম |
মুগডাল ভাজার গন্ধ বার হতে শুরু করলেই ,কড়াইতে দিলাম ....জলে ধোয়া জল ঝরানো মুসুরির ডাল | একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম জলে ধোয়া জল ঝরানো গোবিন্দভোগ চাল | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ খুব ভালো করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম |
উপকরণের জল টেনে যেতেই ....কড়াইতে দিলাম আদা বাটা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে চাল ডাল আর আদা ভালো করে কষতে লাগলাম | একটু ভাজা ভাজা গন্ধ বার হতেই দিলাম ,হলুদগুঁড়ো ,জিরেগুঁড়ো আর লাল লঙ্কা গুঁড়ো | দু - একবার নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম টমেটোর কাটা টুকরোগুলো , নুন আর চিনি | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে শুরু হলো কড়াইতে রাখা সমস্ত উপকরণের নাড়াচাড়া | আহা - হা চাল - ডাল কষার কি সুন্দর গন্ধ ...!! রান্না কষা হয়ে এসেছে মনে হতেই ,কড়াইতে দিলাম প্রয়োজন মতো কুসুম কুসুম গরমজল | জল টগবগ করে ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে খিচুড়ি হতে দিলাম |
খিচুড়ি বেশ খানিকটা হয়ে আসতেই ,আঁচ বাড়িয়ে খিচুড়ির মধ্যে দিলাম ,কপি - আলুর টুকরোগুলো আর কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা | সমস্ত কয়েকবার নেড়েচেড়ে দিয়ে ,আবার আঁচ কমিয়ে রান্না হতে দিলাম | কপি - আলু - চাল - ডাল সু - সেদ্ধ হয়ে গেলে আর রান্নায় জলের পরিমান ও ঠিক ঠাক মতো হয়ে এলে ....রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | বাহঃ ,দারুন টেস্টি টেস্টি হয়েছে তো !! ....এবার হওয়া খিচুড়িতে দিয়ে দিলাম ...২-৩ চামচ মতো ঘি আর দিলাম ...প্রথমেই তেলে ভেজে রাখা গোটা গোটা শুকনো লঙ্কাগুলো | সমস্ত একবার নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | খিচুড়িতে দিলাম ঢাকা |
মধ্যাহ্ন ভোজের টেবিলে আজ আমরা সব্বাই | হৈ...হৈ ..করে শুরু হলো খাওয়া - দাওয়া ......গরম গরম খিচুড়ি ,বেগুনভাজা ,ডিমভাজা ,পাঁপড় ভাজা ..আর সঙ্গে টমেটোর মুখরোচক চাটনি | একেবারে পিকনিকের আমেজ |খুব মজা করে ,আনন্দ করে দুপুরের খাওয়া শেষ হলো | আমরা সবাই খুশি .......| এদিকে তো বাইরে ঝির - ঝির করে বৃষ্টি হয়েই চলেছে ...হয়েই চলেছে | সঙ্গে বয়ে চলেছে খুব হালকা জোলো হাওয়া | আর এই হাওয়ার ধাক্কাতেই গাছের পাতায় পাতায় জমে যাওয়া বৃষ্টির জল টুপ্ - টুপ্ করে ঝরে পড়ছে ...| ভীষণ সুন্দর এক ভালোলাগা দৃশ্য .....পুরোপুরি মেঘলা দিনের এক মনোরম পরিবেশ ........
সব্বাই বর্ষাকে উপভোগ করুন | সঠিক সঠিক খাওয়া দাওয়া করে শরীর সুস্থ রাখুন | ভালো থাকুন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |
Comentarios