top of page
Writer's pictureKaveri Nandi

মৌরী - ফোরণে - রুই


মৌরী .....আমার মনে হয় মুখশুদ্ধি হিসাবে সবার প্রিয়, রান্নাঘরের এক দারুন উপকরণ। যেমন মিষ্টি গন্ধ তেমন মিষ্টি স্বাদ। একটু মুখে দিলেই মনে হয় ,আর একটু খাই না ! রান্নাঘরের কোনো সুস্বাদু মেনুকে আরোও সুস্বাদু করতে আমরা মৌরীকে নানাভাবে ব্যবহার করি। মৌরীও কিন্তু শরীরের জন্য খুব উপকারী। শরীর ঠান্ডা রাখতে ,পেট ভালো রাখতে ,গ্যাস অম্বল দূরে রাখতে, মুখের স্বাদ বাড়াতে মৌরী অসাধারণ।


এই যুগ থেকে পিছিয়ে ,বহু বহু যুগ আগে ,যখন একদল মানুষের থেকে আরেকদল মানুষের যোগাযোগের দূরত্ব ছিল বেশ বেশি ,সহজে চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে পৌঁছানো যেত না ,বা চিকিৎসা ব্যবস্থা বোঝাই যেত না ,তখনও কিন্তু মানুষ কঠিন কঠিন অসুখে ভুগতো আর বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতো। মানুষের এই কষ্ট দূর করতে কিছু মানুষের ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম ,অনেক অনেক চেষ্টা।তারা

চেষ্টা করতো প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডার থেকে রোগ প্রতিরোধক হিসাবে যদি কিছু পাওয়া যায় ......তারা বহু বহু ওষুধ আবিষ্কারও করে ফেললো ।


কিন্তু অনেক সময় হয়তো সেই ওষুধ পেতেও কষ্ট ছিল ,তাই মানুষের এবারের চেষ্টা ,প্রকৃতি থেকে নানা উপাদান সংগ্রহ করতে ,যা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে ,মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আবিষ্কার হলো রান্নাঘরের নানা উপকরণ ,যা রান্নার স্বাদ তো বাড়াবেই আর বাড়াবে মানব শরীরের ইমিউনিটি। নানা ঔষুধীগুনে ভরপুর সতেজ টাটকা প্রকৃতির সেই উপাদান মানুষের অনেক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সত্যিই বাড়িয়ে দিলো , যেখানে রোগ সেই প্রতিরোধের পাঁচিল ডিঙিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশে বেশ বাধা পেতো,প্রবেশ করতে পারতো না। প্রবেশ করে ফেললেও ,তাড়াতাড়ি পালিয়েও যেত। তাই আমাদের রান্নাঘরের প্রতিটি উপকরণই ....এক একটি মহা ঔষধ।


এখন তো ভীষণ গরম। এই সময়ে একটু শরীর ঠান্ডা থাকলে ,পেট ভালো থাকলে ,মনও ভালোই থাকে। সবার কথা ভেবে ,আর সব কথা ভেবে আজ রাঁধছি মৌরী ফোরণে রুইমাছ।ছোট বেলায় মা - কে দেখেছি ,এক ফোঁটা মৌরী বাটায় মাছের ঝোল রাঁধতে। অসাধারণ ! স্বাদে ছিল অসাধারণ! তবে আজ মৌরীকে রান্নায় আমি ফোড়ন হিসাবে ব্যবহার করছি।


উপকরণ :-


  • রুইমাছ - ১কেজি ( খোসা ছাড়িয়ে ল্যাজা ,মুড়ো নিয়ে চাকা চাকা করে কাটা ৮-৯টি পিস )

  • আলু - ৫-৬টি ( খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি ২ টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো )

  • মুখী কচু - ৬-৭টি ( খোসা ছাড়িয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে লম্বালম্বি ২ টুকরো করে কাটা )

  • টমেটো - ১টি ( ছোট সাইজের, কুচানো )

  • পেঁয়াজ - ২টি ( ছোট সাইজের,মিহি করে বাটা )

  • কাঁচালঙ্কা - ৫-৬টি ( ২টি পেঁয়াজের সঙ্গে বাটা ,বাকিগুলো গোটা )

  • গোটা মৌরী - ২ চামচ

  • হলুদ - ২-৩ চামচ

  • লাল লঙ্কাগুঁড়ো ১-২ চামচ

  • কাশ্মীরি লঙ্কাগুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ

  • জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ

  • ধনেগুঁড়ো - ১.৫-২ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো

  • ভাজা মশলা - ১- ১.৫ চামচ ( ১চামচ গোটা জিরে ,১চামচ গোটা ধোনে ,ছোট একটি লাল শুকনোলঙ্কা ,সবগুলো ভেজে নিয়ে ,গুঁড়ো করা ,রান্নায় দিলে রান্না স্বাদে বাড়ে। তবে ইচ্ছা না হলে নাও দিতে পারেন। তাতে রান্নার স্বাদ মোটেই কমে যাবে না )


পদ্ধতি :-


মাছের টুকরো গুলো ভালো করে জলে ধুয়ে নিয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হলে মাছ ভালো করে ভেজে নিলাম। এবার এই তেলের মধ্যেই আর একটু তেল দিলাম। দিলাম মৌরী ফোড়ন ,কাটা আলুর টুকরো গুলো ,কাটা কচুর টুকরোগুলো। দিলাম কয়েকদানা চিনি , প্রয়োজনমতো নুন আর হলুদগুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলু আর কচু রাঙা করে

ভেজে নিয়ে দিলাম জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো,লাল লঙ্কা গুঁড়োআর টমেটোর টুকরোগুলো। সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম।


মশলা কষার সুন্দর গন্ধ ! আর দেরি না করে দিলাম কাশ্মিরি লঙ্কাগুঁড়ো। একটু নেড়েচেড়ে ঝোলের পরিমান অনুযায়ী জল দিলাম। বেশি আঁচে সুন্দর গন্ধ সমেত ঝোল ফুটে উঠতেই ,ভাজা মাছ গুলো ঝোলের মধ্যে দিলাম। ২-১ বার বেশি আঁচে ফুটিয়ে আঁচ কমিয়ে মাছের ঝোল হতে দিলাম। আলু ,কচু নরম হতেই ঝোলের স্বাদ দেখে নিলাম। বাকি গোটা কাঁচালংকাগুলো ঝোলের মধ্যে দিয়ে বেশি আঁচে ফুটিয়ে ঝোলের পরিমান ঠিকঠাক করে নিলাম। গ্যাস বন্ধ করে রান্না ঢাকা দিয়ে রান্নাঘর থাকে বেরিয়ে এলাম। বড়োই গরম। সত্যি সত্যিই বড়োই অস্বস্তিকর।


স্নান সেরে পরিপাটি হয়ে সব্বাই দেখি খাবার টেবিলে বসে গেছে ।সবার একই কথা .... কি সুন্দর ! কি অপূর্ব !ঝোলের গন্ধে মন ভরে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি দাও। তাড়াতাড়ি দাও।...........শেষ পাতে গরম গরম ভাত আর গরম গরম মৌরী -ফোরণে - মাছের ঝোল সত্যিই বড়োই অপূর্ব ! স্বাদে বড়োই ভালো।বড়োই মধুর। খেয়ে দিয়ে শান্তিতে আর আনন্দে মনগুলো ভরে গেলো


আপনারাও ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন ,আনন্দে থাকুন।

5 views0 comments

Comments


bottom of page