বাংলার ঋতুচক্রে ....ছয় ঋতু ...গ্রীষ্ম ,বর্ষা ,শরৎ, হেমন্ত ,শীত আর বসন্ত ....বছরে ১২ মাসের ...২টি করে মাস নিয়ে এক একটা ঋতু | আর কি আশ্চর্য্য !....বাংলায় প্রতিটি ঋতুর চরিত্র কিন্তু খুব সুন্দর ভাবে অনুভব করা যায় | এই ঋতুচক্রের শেষ ঋতু ...' বসন্ত ঋতু '| .......নানা রঙে রাঙা এই ঋতু বোধহয় সমস্ত বাঙালিরই খুব খুব প্রিয় | না বেশি শীতের কাঁপুনি , না গরমের ঝলকানি ......কিন্তু খুব সুন্দর এক আরামদায়ক ওয়েদার | গাছে গাছে কচি কচি সবুজ
সবুজ পাতা, অপূর্ব গন্ধে ভরা কচি কচি আমের মুকুলের উঁকিঝুঁকি ,প্রকৃতির রং তুলিতে পলাশের সৌন্দর্য্য ,সাদা ফুলে ভরা সজনে গাছের মাধুর্য্য , নানা রঙে রাঙা বসন্ত উৎসব আর নানা রঙে রাঙা সুন্দর সুন্দর ফুলে ভরা এই ঋতু যেনো......সবারই এক অনাবিল আনন্দের ঋতু |
কিন্তু শীতের শেষে এই ঋতুর শুরু ....আর এই ঋতুর শেষে গরমের শুরু | আবহওয়া পরিবর্তনের এই সময়টাতে কিন্তু নানা অসুখ - বিসুখের ভয় থেকেই যায় | তবে এই অসুখ-বিসুখ দূরে রেখে শরীরকে সুস্থ রাখার ব্যবস্থা কিন্তু এই সময়ে এই প্রকৃতির ঘরেই রয়েছে | নিমপাতা ,সজনেফুল ,সজনেডাঁটার মতো উপকরণ গুলি যদি আমাদের রান্নাঘরে মাঝে মাঝে ঢুকে পরে আর এগুলি দিয়ে তৈরি
নানা মেনু যদি আমাদের খাবার পাতে মাখে মাঝে পৌঁছে যায় ......তবে কিন্তু অসুখ - বিসুখের ভয় দূরে রেখে , আমরা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতেই পারি আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়াতেই পারি .......
আজ আমার রান্নাঘরেও রয়েছে ,বেশ কচি কচি ২ আঁটি নিমপাতা , রয়েছে আলু ,পেঁয়াজ ,লঙ্কা ,লেবু আর খানিকটা খুব কচি বিনস | ভাবলাম মুচমুচে করে আলু - বিনস ভাজবো ,তবে কিন্তু সব্বার শরীরের ভালোর কথা ভেবে সঙ্গে দেবো নিমপাতা | গরম ভাতে প্রথম পাতে দারুন তো লাগবেই ,আর মুখও স্বাদে ভরে যাবে | বাঃ ! বাঃ ! ......মনে হচ্ছে আমার ভাবনাটা ....ভালোই ভেবেছি |
ভাবলাম বিনস ,আলু আর নিমপাতা ভাজার মেনুটা রান্নার শেষে রাঁধবো | গরম ভাতে ....গরম গরম ভাজা .....ভালো লাগবেই লাগবে ............
উপকরণ :-
নিমপাতা - ২ আঁটি ( পাতাগুলো ভালো করে বেছে নিয়ে ,ছাড়িয়ে নিলাম আর জলে ভিজিয়ে রাখলাম )
বিনস - ২০০ থেকে ২৫০ গ্রামের মতো
আলু - ৩-৪টি ( মাঝারি সাইজের ,খোসা ছাড়িয়ে ,ছোট ছোট ডুমো ডুমো করে কেটে নিয়ে ,জলে ভেজানো )
কাঁচালঙ্কা - ২-১টি ( মিহি করে কুচানো )
শুকনো লঙ্কা - ১টি বা ২টি ( কুচানো )
পাঁচফোড়ন - ১ চা চামচ ( রান্নার এমন এক উপকরণ ,যা রান্নার স্বাদে দারুন স্পেশাল এক মাত্রা এনে দেয় )
হলুদগুঁড়ো - ১- ১.৫ চা চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - অবশ্যই লাগবে ,প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
এখন রান্না শেষে রাঁধতে চলেছি ....নিম - বিনস আর আলু ভাজা | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে দিলাম ,জল ছেঁকে নিয়ে নিমপাতাগুলো | দিলাম এক চিমটে হলুদগুঁড়ো ,এক চিমটে নুন আর এক চিমটে চিনি | আঁচ বাড়িয়ে নিমপাতা মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিলাম |
এবার কড়াইতে ,ওই তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো অল্প তেল দিলাম | তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে দিলাম ,পাঁচফোড়ন ,কুচানো শুকনোলঙ্কা ,কুচানো কাঁচালঙ্কা আর জল ঝরানো কাটা আলোর টুকরো গুলো | দিলাম প্রয়োজনমতো হলুদগুঁড়ো আর চিনি | আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম ,কাটা
বিনসের টুকরোগুলো আর প্রয়োজনমতো নুন | বেশি আঁচে বেশ কয়েকবার নাড়াচাড়া করে নিয়ে , আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে ,আলু আর বিনস মজতে দিলাম | মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে নেড়ে নিয়ে ,আবার ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম |
আলু আর বিনস ভালো মতো মজে গেছে মনে হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে
ভালো করে নাড়তে লাগলাম | কড়াইতে ছড়িয়ে দিলাম মুচমুচে করে ভাজা নিমপাতাগুলো |সমস্ত উপকরণ নেড়ে নেড়ে ভালো করে মিশিয়ে দিলাম | আঁচ কমিয়ে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | আহা - হা - হা .......কি সুন্দর স্বাদের হয়েছে?আর বে.....শ মুচমুচে ও | আজ গরম ভাতে ,প্রথম পাতে একটু তো চমক লাগবেই ......ঠিক আছে দেখাই যাক ..............
খাবার টেবিলে ,খাওয়া শুরু ,,,,গরম গরম ভাত আর নিম -বিনস - আলু ভাজা দিয়ে | ওহো..হো ..হো ....অপূর্ব ! অপূর্ব ! ....দারুন মেনু তো ! ..এক্কেবারে অ.......সাধারণ ......| সবার আনন্দে খাবার টেবিল যেনো ভরে উঠলো |আর সবার এই আনন্দ পাওয়াটাই তো আমার সবচাইতে পাওয়া .....বড়ো আনন্দ আর খুশি |
খুশিতে থাকুন ,জমিয়ে আর উপভোগ করে খাওয়া দাওয়া করুন |খুব খুব ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন |
Comentários