'' আমার কথাটি ফুরোলো .......নোটে গাছটি মুড়োলো .......'' ......সেই ছোট্ট বেলা থেকেই কতবার .....কতো...কতোবার ,এই কথাটি শুনে আসছি | দিদা যখনিই কোনো গল্প শোনাতেন .....গল্প শেষে এই কথাটাই বলতেন | মা পড়ানোর সময় যখন ...উদাহরণ হিসাবে নানা গল্প বলতেন .....গল্প শেষে মাও এই কথাটাই বলতেন | তাছাড়া ছোটদের নীতিকথা গল্প বইয়ের .....অনেক গল্পের শেষেও এই কথাটাই লেখা থাকতো | এছাড়াও নানা জনের মুখেও মাঝে মাঝেই ,কিছু বলার পরে এই কথাটাই শোনা যায় | খুব পরিচিত আর খুব প্রচলিত একটা কথা ................
কিন্তু আমার মনে এই কথাগুলো কেন ভাসছে ......? .কারণ আমার রান্নাঘরে আজ খুব কচি এক আঁটি নোটেশাক | আর কচি কচি নরম নরম .....নোটে শাকের সবুজ সুন্দর পাতাগুলো দেখেই আমার এই কথাগুলোই বার বার মনে হচ্ছিলো .......| খুব সুন্দর স্পেশাল স্বাদের এই
নোটেশাক | শাক তো আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী | গরম
গরম ভাতের সঙ্গেও খেতে দারুন | শাকে ভাতে বাঙালি ....এটাও কিন্তু একটা প্রচলিত কথা | তবে একটা কথা...... বড়োই সত্যি যে , গ্রাম বাংলার মানুষজন ভাতেরপাতে একটু শাক পেলেই হয়ে ওঠে বেজায় বেজায় খুশি |
আমার বাজারের থলিতে আজ কয়েকটা কচি কচি উচ্ছেও আছে | খুব উপকারী এক সবজি | নানা রোগপ্রতিরোধে এর ক্ষমতা অসীম | নিজেদের ভালো ভেবেই ,তাইতো আমরা মাঝে মাঝেই এই সবজিকে রান্নাঘরে এনে তুলি | আর নানাভাবে রান্না করে আমাদের জিভের স্বাদ বাড়াই | উচ্ছে
....নোটেশাক , দেখেই ভেবে ফেললাম ,আজ নোটে - উচ্ছে রাঁধবো | খুব খুব সুস্বাদু এক মেনু | গরম ভাতে প্রথমপাত দারুন ভাবে জমিয়ে তোলে | উপকারী তো বটেই ,আর স্বাদেও ভরা | জিভের স্বাদে চমক এনে দেয় | স্বাদ বাড়িয়ে দেয় | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় | আর তাইতো '' নোটে - উচ্ছে '' দারুন এক মেনু......,হেলদীও বটে আর টেস্টিও বটে |
রান্নার কিছুক্ষন আগেই , নোটেশাক ভালো করে বেছে নিয়ে কুচিয়ে ফেললাম | কুচানো শাক জলে ভিজিয়ে দিলাম | রান্নার আগে শাক অবশ্যই কেটেকুটে জলে খানিক্ষন ভিজিয়ে রাখতেই হবে | নোংরা ধুলোবালি আর পোকামাকড় পরিষ্কার করার জন্য | কচি কচি উচ্ছেগুলোও লম্বালম্বি করে সরু সরু করে কেটে ধুয়ে , জল ঝরিয়ে রাখলাম | এখন এটাই ঠিক হলো যে ,রান্না শুরু হলে ,সময় করে এক সময়ে নোটে - উচ্ছে রেঁধে ফেলবো ..............
উপকরণ :-
নোটেশাক - এক আঁটি
উচ্ছে - কচি কচি ,১০০ গ্রাম
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টো একটু করে ফাটানো
কাঁচালঙ্কা - ২-৩টে গোটা ,২টি লম্বালম্বি ,পুরোপুরি চেরা
পাঁচফোড়ণ - ১/২ চামচ মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না করছি ....রান্না করেই চলেছি | এবার করবো নোটে - উচ্ছে রান্না | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে উঠলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ২টো ফাটানো শুকনোলঙ্কা ছেড়ে দিলাম | একটু নেড়েচেড়ে লংকায় ভাজা ভাজা রং ধরে এলেই , কড়াই থেকে তুলে নিয়ে রেখে দিলাম | রান্না শেষে কড়াইতে দিয়ে দেবো |
এবার কড়াইতে দিলাম পাঁচফোড়ন আর চেরা কাঁচালংকাগুলো | ফোরণের সুন্দর গন্ধ বের হতেই দিয়ে দিলাম ,জলে ধুয়ে কেটে রাখা কচি কচি উচ্ছে গুলো | দিলাম ১/২ চামচ হলুদগুঁড়ো ,প্রয়োজনমতো নুন,প্রয়োজনমতো স্বাদ
বাড়াতে অল্প চিনি | সমস্ত উপকরণ আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মুচমুচে করে ভেজে নিয়ে ..........কড়াইতে দিয়ে দিলাম ,জল ঝরানো ,কুচানো নোটে শাকগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ২-১ বার নেড়েচেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে , রান্না মজতে দিলাম |
কি সুন্দর গন্ধ !!! জিভে জল আনা গন্ধ !!! রান্নাঘর শাক - উচ্ছের স্পেশাল গন্ধে ভরে উঠেছে | আর আমার তো মনে হয় ,এই গন্ধে প্রকৃত খাদ্য রসিকদের খিদে পেয়েই যাবে | মন আর জিভ দুজনেই মনে মনে
বলে চলবে কখন খাবো , কখন স্বাদ পাবো | ঢাকা খুলে মনে হলো রান্না
মজেই গিয়েছে | রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম | নাহঃ......দারুন তো হয়েছেই | সব ঠিক আছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে ,দিয়ে দিলাম ভেজে রাখা শুকনোলঙ্কা ২টো আর ২-৩টে গোটা কাঁচালঙ্কা | সমস্ত উপকরণ নিয়ে , কড়াইয়ের শাক অল্প ভাজা ভাজা ...অল্প রসা রসা মতো করে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | রান্না ঢেলে রাখলাম একটা পাত্রে | দিলাম হালকা একটা ঢাকা |
এবার আমাদের খাওয়া শুরু | মধ্যাহ্নভোজের খাওয়া দাওয়া | ওহো হো হো ......গরম ভাতের প্রথম পাত তো জমে উঠলোই , আর জিভের স্বাদ ও অনেক অনেক বেড়ে গেলো | খেতে বড়ো সুন্দর লাগলো .....বড়োই সুন্দর | সেই সঙ্গে পরের রান্নাগুলোর খাওয়ার ইচ্ছে টাও যেনো অনেকটা বেড়ে গেলো ........| মানে খাওয়ার শুরুটা ভালো হলো ......তাই খাওয়া দাওয়াও আনন্দ আর ইচ্ছেটাও এগিয়ে চললো .....এগিয়ে চললো .......আর এগিয়ে চললো .......চললো ........চললো .........
ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন ,অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |
Comentários