" ওল খেয়ো না, ধরবে গলা......." সেই ছোট বেলা থেকে যখন বইয়ের পাতায় অ আ ক খ ও ঔ এই অক্ষর গুলোর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তখন "ও" দিয়ে প্রথম বাক্যই তৈরী করেছি....ওল খেয়ো না ধরবে গলা, কারণ এটা একটা প্রবাদের মতোই হয়ে আছে | লোকের মনে ভয় আছে ওল খেলেই গলা বোধহয় কুটকুট করবে | কিন্তু.......ওল যে খেতেও খুব সুন্দর আর তাই আমরা লোভ সামলাতেও পারি না |
ওল রান্না করে কখনো তেতুলের সঙ্গে, কখনো আচারের সঙ্গে খাই যাতে আমাদের গলা কুটকুট না করে | গ্রামে গঞ্জে পুকুড়পাড়ে বা জলা জমির পাশে, মাটির নিচে থেকে যে ওল গুলো পাওয়া যায়, জোলো জোলো ভাব থাকার জন্য সেগুলোতে গলা কুটকুট করতেই পারে |
কিন্তু এখন বাজারে যে ওল বিক্রি হয় সেগুলোতে কিন্তু একদমই গলা ধরেই না | সেই ওল দিয়ে ওলের ডালনা, ওলের বড়া, ওল ভাতে খেতে অসাধারণ হয় | গলা তো ধরেই না, উপরন্তু এক সুন্দর স্বাদে মুখ ভরে যায় |
আমার পরিবারের সবাই কিন্তু ওল খেতে খুবই পছন্দ করে | তাই ওল দিয়ে তৈরী যেকোনো রান্না মেনুতে রাখতে আমার অসুবিধে হয় না | আজকে দুপুরের মেনুতে রেখেছি ওলের ডালনা ---------
উপকরণ :-
ওল - বাজার থেকে কিনে আনা ৫০০ গ্রাম (খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কাটা)
আলু - ৪,৫ টি একটু বড় সাইজের (খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কাটা)
আদা বাটা - ২ চামচ
রসুন বাটা - ১ চামচ
কাঁচা লঙ্কা - ২ থেকে ৩ চামচ
গোটা জিরে - ১ চামচ
গোটা শুকনো লঙ্কা - ২টি
হলুদ - ১ থেকে ১.৫ চামচ
জিরে গুঁড়ো - ৩ থেকে ৪ চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো - ১/২ থেকে ১ চামচ (যদি প্রয়োজন মনে হয়)
নূন - প্রয়োজন মতো
চিনি - প্রয়োজন মতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজন মতো
গরম মশলা - ১/২ চামচ
ঘি - ১ চামচ
পদ্ধতি :-
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে, কড়াইতে কিছু পরিমাণ জল দিলাম | জল ফুটে উঠলে, জলে ধোয়া ওলের টুকরো গুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | দু এক ফুট হয়ে গেলেই ওল গুলো জল থেকে ছেঁকে তুলে রেখে দিলাম |
(এটা করার ফলে ওলের কষটা জলের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে | কিন্তু এটা বেশি ফোটানো যাবেনা.....নয়তো রান্নার আগেই ওল গলে যাবে ) |
কড়াই পরিষ্কার করে গ্যাসে চাপালাম | প্রয়োজন মতো তেল দিলাম | তেল গরম হলে, দিলাম --- গোটা জিরে, ফাটানো শুকনো লঙ্কা আর জলে ধোয়া আলু গুলো | ভালো করে ভাজতে লাগলাম |
একটু ভাজা ভাজা হয়ে গেলেই, দিলাম ওলের টুকরো গুলো | সমস্তটা একসাথে আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম |
একটু নাড়াচাড়া করে, দিলাম আদা বাটা, রসুন বাটা, কাঁচা লঙ্কা বাটা | এবার আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে কষে নিলাম | ভালো মতো কষা হয়ে গেলে, আঁচ কমিয়ে, দিলাম হলুদ গুঁড়ো, নূন, চিনি, জিরে গুঁড়ো আর লঙ্কা গুঁড়ো|
আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম | কষা মশলার সুন্দর গন্ধ বেরোলেই রসা রসা হবে এই ভেবে জল দিলাম | ঝোল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম | আলু আর ওল সুন্দর সেদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ বাড়িয়ে রসা রসা করে নিলাম | রান্নার স্বাদ দেখে নিয়ে, দিলাম গরম মশলা আর ঘি | দু একবার নেড়েচেড়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম আর রান্না একটা ঢাকা দিয়ে রেখে দিলাম|
দুপুরে খাবার পাতে সব্বাই ভীষণ ভীষণ খুশি | আনন্দ করে ওলের ডালনা দিয়ে আমরা দুপুরে গরম গরম ভাত খেলাম আর সুন্দর স্বাদে আমাদের মুখটা ভরিয়ে নিলাম | বড়ই ভালো...............
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন |
Comments