top of page
Writer's pictureKaveri Nandi

পেঁয়াজে - ভাজা - ভাজা - বেলেমাছ


বৈশাখ - জৈষ্ট্য ....গ্রীষ্মকাল | বাংলার ছয় ঋতুর প্রথম ঋতু | এই সময়ে আবহাওয়ায় তাপমাত্রার পরিমান ধীরে ধীরে খুবই বেড়ে যায় | মানুষজনের শরীর - মন কেমন যেন ছটফট করতে থাকে | অসহ্য গরমে না থাকে খাওয়ার ইচ্ছা ....না হয় ভালো ঘুম | কিন্তু মানুষ তো সহনশীল .......মনে মনে ভাবে ....ঠিক আছে ,ঠিক আছে ...একটু বৃষ্টি পড়লেই ...স--ব ঠিক হয়েই যাবে............চেয়ে থাকে বৃষ্টির আশায় .....এক মনে করে চলে নিজের নিজের কাজ ........



কিন্তু এই কঠিন ,অসহনীয় আবহাওয়ার মধ্যেও সব সময়েই শরীর মন সুস্থ রাখার চেষ্টা তো করতেই হবে | আর তাইতো প্রতি বাড়ির গৃহিণীদের আন্তরিক চেষ্টা ....সংসার সুস্থ আর আনন্দে রাখার | আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শরীর আর মন সুস্থ রাখতে আমাদের খাওয়া - দাওয়ার অভ্যাসের এক দারুন ভূমিকা থাকে | ঠিক সময়ে ঠিক ঠিক খেতে হবে , আর অনেক অনেক ভালো থাকতে হবে | সংসারে ...সবার শরীর মন সুস্থ তো ....সংসার ও সুস্থ |


মাছ প্রিয় বাঙালির ...১২ মাস ...মানে ৩৬৫ দিন , ভাতের পাতে ...এক টুকরো মাছ ,যেন বড়োই প্রিয় ! যদিও আমাদের বাংলা-ছয় ঋতুর রানী ........আর এই ছয় ঋতুর আনাগোনাও আমরা ভালোভাবেই অনুভব ও করতে পারি ....কিন্তু এদের মধ্যে গ্রীষ্ম - বর্ষা -শীতের অনুভবটাই মনে হয় বেশি | আর তারমধ্যে গ্রীষ্মকাল মানেই তো দাবদহের কাল | এক এক সময়ে তাপমাত্রা এতোই অসহনীয় হয়ে ওঠে যে ,তখন নাওয়া - খাওয়া - শোয়া সবই যেন কষ্টকর হয়ে ওঠে | এই সময়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে বার বার স্নান ,পেট সুস্থরাখতে হালকা - পুলকা খাওয়া - দাওয়া ..আর তবেই নিশ্চিন্তে একটু ঘুম |


আর ঠিক এই সময়েই অনেক অনেক বাঙালির রান্নাঘরে মাছ তো আসেই.......কিন্তু শরীর সুস্থ রাখতে সেই মাছ ....বাঙালির খুব খুব পছন্দের ছোট মাছ | এখন তো শহরের বাজারে বাজারে আশেপাশের গ্রামের পুকুরগুলো থেকে আসা ছোট ছোট আর খুব টাটকা মাছ ও পাওয়া যায় | স্বাদে যেমন অসাধারণ ..... তেমনি গরমের আবহাওয়ায়

জিভের তৃপ্তিও অনেক অনেক বাড়িয়ে দেয় | শরীর রাখে সুস্থ ,বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা | কারণ ফসফরাস সমৃদ্ধ ছোট মাছ হাড়ের গঠন মজবুত করতে ,দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে , সহজপাচ্য বলে ...শরীর আর মন ভালো রাখতে খুবই উপকারী | অনেক অনেক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও বাড়িয়ে দেয় | আর তাইতো ...বাঙালির রান্নাঘরে মাঝে মাঝেই ...ছোট ছোট ,চকচকে রুপোর মতো ...টাটকা টাটকা কুচো মাছ তথা ছোট মাছ |


এই গরমে ,আজ আমার রান্নাঘরে ও খুব হালকা .....অথচ খুব টেস্টি টেস্টি দুপুরের মেনু | আজ বাজার থেকে এসেছে ৩০০ - ৩৫০ গ্রামের মতো খুব ছোট ছোট আর খুব খুব টাটকা .....চকচকে বেলেমাছ | দারুন স্বাদের মাছ | ভাবলাম একটু চটপটা স্বাদে রাঁধবো ,পেঁয়াজ আর বেলেমাছের ভাজা ভাজা | খুবই মুখরোচক | গরম ভাত ,গরম গরম ডাল ,একটুকরো গন্ধরাজ লেবু আর সঙ্গে আমার তৈরি ....পেঁয়াজ দিয়ে টেস্টি টেস্টি বেলেমাছের ভাজা | জমে তো যাবেই ..........


উপকরণ :-

  • বেলেমাছ - ৩০০- ৩৫০ গ্রাম ( ছোট ছোট সাইজের খোসা ছাড়িয়ে ,কেটেকুটে ,জলে ধুয়ে ,নুন আর হলুদ মাখানো )

  • পেঁয়াজ - ছোট সাইজের ১০-১২টা ( খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে মিহি করে কুচানো )

  • কাঁচালঙ্কা - ৮-১০টি ( অর্ধেক করে চেরা , তবে ঝাল সবসময়েই নিজের নিজের পছন্দমতো )

  • পাকালংকা - ৩-৪ টি ( বড়ো বড়ো টুকরো করে কাটা )

  • শুকনোলঙ্কা - গোটা আর একটু করে ফাটানো , ১-২টি

  • পাঁচফোড়ন - ১-১.৫ চামচ

  • হলুদগুঁড়ো - ১- ১.৫ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - কয়েকদানা ,অসাধারণ ....টেস্টি টেস্টি এক স্বাদের জন্য

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো , এই রান্নাটা কিন্তু সর্ষের তেলেই বেশি টেস্টি টেস্টি


পদ্ধতি :-


শুরু করে দিলাম রান্না বান্না | খুবই সহজ রান্না | চাপাও আর নামাও | রান্নার উপকরণ ও খুবই কম লাগে ,আর তার সবটাই সবসময়েই হাতের কাছে ,আমাদের রান্না ঘরে থাকেই | রান্না সহজ ,কিন্তু একেবারে চটপটা | গরম ভাতে - গরম ডালে অসাধারণ | তবে আবারো বলছি ...সঙ্গে এক টুকরো লেবু থাকলে তো কোনো কথাই হবে না | অনেকে আবার এই মুখরোচক পেঁয়াজ - ভাজায় - বেলেমাছ ....দিয়ে গরম গরম ভাত মেখে খেতেও খুব ই ভালোবাসে | খেতে লাগেও খুব টেস্টি টেস্টি |

এই গরমে সবার ভালো থাকার জন্য .....আবার সবার জিভে চটপটা স্বাদ বজায় রাখতে ...মনে হয় তো ভালোই মেনু | ছোট ছোট টাটকা চকচকে বেলে ....খেতে তো খুব মিষ্টি স্বাদেরই ...কিন্তু শরীরের জন্য ও ভীষণ ভীষণ উপকারী |


গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল ভালোমতো গরম হতেই ,আঁচ কমিয়ে ,কড়াইতে নুন - হলুদ মাখানো কিছু বেলে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে বেলে মাছগুলো মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিলাম | এইভাবে সব মাছ ভেজে ফেললাম |



মাছ ভাজা হয়ে গেলে ,কড়াইয়ের ওই তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিয়ে দিলাম | তেল গরম হলে ,আঁচ কমিয়ে দিলাম গোটা শুকনোলঙ্কা ,কয়েক টুকরো অর্ধেক করে কাটা কাঁচালঙ্কা আর পাঁচফোড়ন | বাহঃ! ফোরণের কি দারুন গন্ধ ! দিলাম কুচানো পেঁয়াজগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম | আবার দিলাম কয়েকটা কাটা কাঁচালঙ্কা...... আর আবার ভাজতে লাগলাম | পাঁচফোড়নের সঙ্গে পেঁয়াজ কাঁচালঙ্কা ভাজার গন্ধটাও কিন্তু ......জিভে জল আনা এক গন্ধ | যে গন্ধটা কিন্তু ...আমরা সব বাঙালিরাই ...মাঝে মাঝেই আমাদের রান্নাঘরে পাই |


কম আঁচে পেঁয়াজ ভাজতে ভাজতে একটু নরম আর বাদামি হয়ে আসতেই ,মিশ্রনে দিলাম সামান্য হলুদগুঁড়ো ,নুন আর কয়েকদানা চিনি ( রান্নায় একটু চটপটে স্বাদ আনতে ) | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সব উপকরণ একটু

নাড়াচাড়া করে নিয়ে , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম ভাজা বেলেমাছগুলো | আঁচ বাড়িয়ে সমস্ত উপকরণ এক - দুবার নেড়ে নিয়ে ,হাতে করে রান্নায় কয়েকবার জল ছিটিয়ে দিয়ে ,রান্নাটা নেড়েচেড়ে ,আঁচ কমিয়ে ,একটা ঢাকা দিয়ে রান্না একটু মজতে দিলাম |


কিছুক্ষনের মধ্যেই মাছ আর পেঁয়াজ ভাজার সুন্দর গন্ধে রান্নাঘর ম - ম করতে লাগলো | মনে হচ্ছে রান্নাটা হয়ে এসেছে | ঢাকা খুলে প্রথমেই রান্না টেস্টি টেস্টি হয়েছে কিনা ....চেখে নিলাম | ঠিকঠাক মনে হতেই কয়েকটা পাঁকালঙ্কার টুকরো কড়াইতে ছড়িয়ে দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে হালকা হাতে একটু নাড়তে লাগলাম | মাছ আর পেঁয়াজ মাখো মাখো হয়ে আসতেই ,গ্যাস বন্ধ করলাম | রান্না নামিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলাম ....দুপুরের অপেক্ষায় |


দুপুরের খাওয়া সবাই মিলে একসঙ্গে শুরু করলাম | আহা - হা - হা ........খাওয়ার তৃপ্তিতে মন - প্রাণ যেন ভরে গেলো | দারুন দারুন | সবাই খুশিতে উচ্ছ্বসিত ! আনন্দে আহ্লাদিত ! .......আজকের মেনুতেই যেনো ছিল ...........মনের শান্তির সঙ্গে শরীরের ও অনেক অনেক শান্তি |


সবাই ভালো থাকুন ,আনন্দে থাকুন ,থাকুন অনেক অনেক সুস্থ |



5 views0 comments

Comments


bottom of page