এই বাংলায় শীতকাল তো আমাদের সবার ভীষণ ভীষণ প্রিয় | আর খাদ্য রসিক বাঙালির আরো বেশি পছন্দ শীতের নানা সবুজ শাক - সবজি থেকে শুরু করে নানা ধরণের রসালো খাবারের স্বাদ | শীতের শুরুর যে কোনো সবজিই যেন কেমন এক দারুন স্বাদে ভরা থাকে | যে ভাবেই রান্না করি না কেন ,স্বাদগুণে হয়ে ওঠে অনন্য |
যেমন শীতের এক সবুজে ভরা সবজি পালংশাক | আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ ভীষণই উপকারী এক সবজি | হালকা সাঁতলানোতেও এই সবজি স্বাদে ......অসাধারণ হয়ে ওঠে | আমাদের খাদ্য তালিকায় মাঝে মাঝে এই সবজি রাখা অবশ্যই উচিত ,আর যদি রোজ রাখা যায় ? .....তাহলে তো উপকারই উপকার | নানা রোগ কে দূরে রেখে পালংশাক শরীরকে রাখে সবল আর সুস্থ | আমাদের শরীরের হাড়কে করে মজবুত | হিমোগ্লোবিনএর মাত্রাও ঠিক রাখতে সাহায্য করে |
বাজার থেকে আনা গোড়া সমেত খুব ছোট্ট ছোট্ট কচি কচি পালংশাক গুলো দেখেই মন খুশিতে ভরে উঠলো | বাজারে আরোও রয়েছে কিছু টাটকা সবজি | ভাবলাম সব সবজি দিয়ে হালকা করে সাঁতলে নিয়ে ,আজ পালং রাঁধবো | তেল মশলা কম থাকবে ,কিন্তু গরম গরম ভাতে -গরম গরম সব সবজিতে পালং সাঁতলানো যে কি অসাধারণ লাগে ,তা অনুভব করতে গেলে আগে খেতেই হবে | যারা খেয়েছে তারাই জানে এই হালকা রান্নাটা ---হালকা অথচ স্বাদে গুনে কি ভীষণই ভালো |
আজ দুপুরের নিরামিষ মেনু সব সবজি সমেত পালং সাঁতলানো ........
উপকরণ :-
পালংশাক - গোড়া সমেত খুব কচি কচি ২ আঁটি ( গোড়া গুলো একটু ছাড়িয়ে নিয়ে ,কেটে পরিষ্কার করে নেওয়া গোটা গোটা পালংশাক ,জলে ভিজিয়ে রাখা )
বেগুন - ছোট একটা ( লম্বা লম্বা টুকরো করে কাটা )
সিম - ১৫০ গ্রাম ( পরিষ্কার করে গোটা গোটা রাখা )
আলু - ২টো ( ছোট সাইজের ,খীসা সমেত লম্বা লম্বা করে কাটা )
কাঁচালঙ্কা - ৫-৬ টি ( একটু করে চিরে রাখা )
বিউলির ডালের বড়ি - ৮-১০টি
পাঁচফোড়ন - ১/২ চামচ থেকে ১ চামচ মতো
গোটা শুকনোলঙ্কা - ৫-৬ টি ( একটু করে ফাটানো )
হলুদ - ১ চামচ মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো এই রান্নাতে আরো অনেক সবজি দেওয়া যেতেই পারে |
পদ্ধতি :-
রান্নাঘরে ঢুকে রান্না শুরুর প্রথমেই ,জলে ভেজানো পালং শাক গুলো জল ঝরিয়ে তুলে রাখলাম | অন্যান্য সব সবজি গুলোও ধুয়ে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে একটু সর্ষের তেল দিলাম | বড়িগুলো ভেজে তুলে রাখলাম | এইবার কড়াইতে ওই তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো একটু তেল দিয়ে দিলাম ,গোটা শুকনোলঙ্কা ,গোটা চেরা কাঁচালঙ্কা আর পাঁচফোড়ন | দিলাম খোসাশুদ্ধ জলে ধোয়া আলুর টুকরোগুলো ,একটু নেড়েচেড়ে দিলাম জলে ধোয়া সিমগুলো ,আবার অল্প নেড়েচেড়ে দিলাম বেগুনের টুকরোগুলো ,একটু হলুদ ,নুন আর চিনি |
এবার বেশি আঁচে কয়েকবার ভালো করে নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম জলে ধোয়া গোড়া সমেত কেটে রাখা পালংশাকগুলো | কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ হালকা হাতে একটু উপর নিচ করে নিয়ে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম | কয়েক মিনিটের মধ্যেই ...আহা - হা রান্নার কি সুন্দর গন্ধ ! মন যেন আহ্লাদে ভরে যাচ্ছে | কি ভালো ! কি ভালো ! কত সহজ রান্না ,কত হালকা রান্না অথচ কত স্বাদে ভরা ....কত্তো গুনে ভরা |
কিছুক্ষন পরে কড়াইয়ের ঢাকা খুলে দেখি রান্না থেকে বেশ খানিকটা জল বেরিয়েছে | রান্নাও বেশ মজে গিয়েছে | ভেজে রাখার বড়িগুলোর কয়েকটা ভেঙে আর কয়েকটা গোটা রেখেছিলাম | এখন আঁচ বাড়িয়ে ভাঙা আর গোটা বড়িভাজাগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | একটু নেড়েচেড়ে দিলাম | রান্নার জল শুকিয়ে
আসতেই ,রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | সব ঠিক ঠাক তো হয়েইছে আর খেতে কি দারুন ! আবার খুনতি হাতে হালকা নাড়াচাড়া করে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | একটা পাত্রে রান্না ঢেলে রেখে ঢাকা দিয়ে রাখলাম |
|খাবার টেবিলে খাওয়ার শুরুটা সবার জন্যই দারুন ছিলো | খুব সুন্দর ! বড়োই ভালো |সব্বাই খুব আনন্দ করেই সবজি দিয়ে সাঁতলানো পালং আর গরম গরম ভাত খাওয়া শুরু করলাম |মনে হচ্ছিলো আজ শুধু এটা দিয়েই পুরো ভাত খাওয়া যেতেই পারে| ......মনে হচ্ছিলো শুধু সুন্দর স্বাদই নয় আছে সুন্দর এক তৃপ্তি ও ..............
সব্বাই খুব খুব ভালো থাকুন ,ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া করে থাকুন সুস্থ আর অনেক অনেক আনন্দেও |
コメント