রোজকার বাজার এসে গেছে। রান্নাঘরে ঢুকেও গেছে। দেখি তো আজ বাজারে কি কি এলো...!!!দুপুরের মেনুও তো আমাকেই ঠিক করতে হবে ....। সবজির থলিতে নানা সবজির মাঝে দেখি এক খন্ড ,এই ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ,শোলা কচু। আমার বড়োই প্রিয়। শোলা কচু তো আজ রাঁধবোই.. ঠিক করেও ফেললাম।
তবে কি ভাবে রাঁধবো ? ভাবতে ভাবতে মাছের থলিতে দেখি কিছু চিংড়ি মাছ আর এক কিলো মতো একেবারে টাটকা একটা রুইমাছ। কেটেকুটে পরিষ্কার করা। বাঃ ! বাঃ ! বাজারটা মনে হচ্ছে ভেবে চিনতেই হয়েছে। মেনু -- শোলা কচু দিয়ে রুই মাছের ঝোল। দুপুরে গরম গরম ভাতে ,একেবারে অসাধারণ। খুব খুব আনন্দ হলো। খুব সহজেই মেনু পেয়ে গেলাম .....আর মেনু আমার সবচাইতে ফেভারিট।
কত রকমের কচুর ফলন এই আমাদের বাংলার মাটিতে। প্রত্যেকটিই স্বাদগুণে অসাধারণ। আর অবশ্যই ঔষধীগুনে ভরপুর। কচুর সবচাইতে বড়োগুন আমাদের শরীরের রক্তকে পরিশ্রুত করা। নানা রকম স্বাদের কচু নানা ভাবে মুখরোচক করে রান্না করে মাঝে মাঝেই আমরা আমাদের জিভের স্বাদ পাল্টাতেই পারি আর শরীরকেও সুস্থ রাখার চেষ্টা তো করতেই পারি। প্রকৃতির কোলে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অমূল্য ফলন , আমাদের শরীর স্বাস্থ্য কে ভালো রাখার জন্য ও সুস্থ রাখার জন্যই। আমাদের বুঝে নিতে হবে ,চিনে নিতে হবে আর তা ......গ্রহণ করতেও হবে। তবেই তো আমাদের শরীরও চেষ্টা করবে চনমনে থাকার ,ভালো থাকার।
এবার রান্নায় মন দিই। সব উপকরণই যখন হাতের কাছেই ..........শুরু করা যাক শোলা কচু দিয়ে রুই মাছের ঝোল....যা আমাদের বাড়ির সবার পছন্দের সুন্দর স্বাদের দুপুরের মেনু।
উপকরণ :-
রুই মাছ - ১ কেজি মতো ( ৭ - ৮ পিসের মতো ,আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে কাটা )
শোলা কচু - ৬০০ - ৭০০ গ্রামের মতো ( খোসা ছাড়িয়ে একটু মোটা মোটা ,লম্বা লম্বা আলু ভাজার মতো করে কাটা )
কাঁচালঙ্কা - ৭-৮ টি
গোটা শুকনো লঙ্কা - ২টি ,একটু করে ফাটানো
কালোজিরে - ১ চামচ মতো
হলুদ গুঁড়ো - ২-৩ চামচ
জিরে গুঁড়ো - ৩-৪ চামচ
ধোনে গুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ২-৩ চামচ ( ঝাল নিজের নিজের পছন্দ মতো )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - কয়েকদানা ( রং আর স্বাদের জন্য )
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
মাছ ধুয়ে নুন হলুদ মাখালাম। শোলা কচুর কাটা টুকরো গুলো জলে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে রাখলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল ভালোমতো গরম হতেই আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে রুই মাছের টুকরো কটা কড়া করে ভেজে নিলাম। এবার আঁচ কমিয়ে ওই তেলের মধ্যেই আর একটু তেল দিলাম। তেল গরম হতেই ফোরণে দিলাম ২টো ফাটানো শুকনোলঙ্কা আর
কালোজিরে সঙ্গে দিলাম শোলা কচুর কাটা টুকরো গুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে শোলা কচু ভাজতে লাগলাম।
শোলা কচু গুলোতে খুব হালকা বাদামি রং ধরতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম হলুদ গুঁড়ো ,নুন আর কয়েকদানা চিনি। আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। হলুদের গন্ধ চলে যেতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম জিরেগুঁড়ো ,ধনেগুঁড়ো আর লাল লঙ্কাগুঁড়ো।আঁচ বাড়িয়ে একটু কষে নিয়ে ,ঝোলের পরিমান আন্দাজ করে নিয়ে জল দিলাম।
বেশি আঁচে ঝোল টগবগ করে ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে
দিলাম। ঢাকা খুলে শোলা কচুর টুকরো গুলোকে নরম হতে দেখেই আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের মধ্যে
দিলাম ভাজা রুই মাছের পিস গুলো। বেশি আঁচে ঝোল ফুটছে। ঝোলের পরিমান ঠিকঠাক হয়ে এসেছে মনে হতেই ,ঝোল চেখে নিলাম। বাঃ বাঃ কি সুন্দর স্বাদের হয়েছে। রুইমাছের মিষ্টি স্বাদ আর শোলা কচুর সুন্দর গন্ধে .... রান্নাটাও হয়ে উঠেছে স্বাদে ভরপুর। গ্যাস বন্ধ করলাম।
খাবার টেবিলে হলো দুপুরের খাওয়ার শুরু।খেতে খেতে এলো পাতে রুই আর শোলা কচুর মিষ্টি ঝোল। ঝোল মুখে দিয়েই কেউ একজন বলে উঠলো ...ফাটাফাটি।শুনেই বাকি সবাই বলে উঠলো এক্কেবারে ঠিক। অপূর্ব মাছের ঝোল ......! খুব ভালো ! ভীষণ ভালো !
ভালোর জন্যই তো এতো কিছু।আপনারাও খুব ভালো থাকুন। নিজেদের মনের মতো রান্না করুন। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করুন। আনন্দে থাকুন। অনেক অনেক সুস্থ থাকুন।
댓글