আজকের বাজারের থলি থেকে সবজি নামাতে নামাতে , হঠাৎ চোখে পড়লো, সবুজ সবুজ আর খুব কচি কচি কয়েকটা শিম | আমি তো এক্কেবারে অবাক ! আবার আনন্দে আহ্লাদিত ও | যদিও এখনো বাজারে শিম আসার সময়ই হয়নি , তবুও বাজারে মাঝে মাঝেই অসময়ের সবজির দেখা পাওয়া যায় | আবার কোনো কোনো বিশেষ সময়ের সবজি তো এখন সারা বছরই চাষ হয় | আহা... হা ...কতদিন বাদে আজ আমার রান্নাঘরে সবুজ সবুজ শিম | আমি ভীষণ ভীষণ খুশি ....শিম যে আমার বড়োই প্রিয় সবজি |
আজ তো জমিয়ে শিমের কোনো মেনু রাঁধবোই রাঁধবো | কিন্তু কি রাঁধবো ??? ভাবতে ভাবতে মাছের থলিটা খুলে দেখি এক কিলো মতো একটা রুই মাছ | ল্যাজা ,মুড়ো আর গোল গোল করে কাটা কয়েকটা টুকরো |মাছ তো দেখে মনে হচ্ছে বেশ টাটকা | এই গুমোট গরমে ,এই মাছের পাতলা ঝোল দিয়ে গরম ভাত খেতে কিন্তু অসাধারণ | আর এই ঝোল যদি মাছের সঙ্গে গোটা গোটা কচি কচি শিম দিয়ে রাঁধি ....তবে মনে হয় তা আজকের মেনু স্বাদগুণে নতুন নতুন হবে |
শিম - ভীষণ উপকারী এক সবজি | ক্যালসিয়াম ,আইরন ,ভিটামিন - সি,ভিটামিন - ই ,নানা খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এই সবজি কিন্তু ছোট - বড়ো সবার জন্যই খুব খুবই উপকারী | হার্ট সুস্থরাখতে ,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে , কোলেস্টোরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে , রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখতে , হাড় মজবুত করতে ,নানা রকম কঠিন রোগ প্রতিরোধেও সবুজ সবজি শিম তুলনাহীন | তাই মাঝে মাঝে শিম কে রান্নাঘরে আনতেই হবে |
নানা সবজির নানা গুনের কথা বুদ্ধিমান গ্রাম - গঞ্জের মানুষজন খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে বলেই তো ,গ্রামের ঘরে ঘরে টালির ছাদে বা বাড়ির আশেপাশে - সারা বছরই ছড়িয়ে থাকে নানা ধরণের সবজির গাছ ..... শিম গাছ তো থাকেই থাকে |
বাজার থেকে আনা মাছের টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে ,নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | এদিকে সকালের সমস্ত কাজ কর্ম গুছিয়ে নিয়ে শুরু করলাম রান্নার জন্য সবজি কাটাকুটি |প্রথমেই গোটা গোটা শিমগুলো ভালো করে বেছে নিয়ে ,দু - দিক কেটে জলে একটু ভিজিয়ে দিলাম | শিম দিয়ে মাছের ঝোল রান্না শুরু করতে আর দেরি করবোই না ......................
উপকরণ :-
রুই মাছ - ১ কেজি --ল্যাজা মুড়ো নিয়ে ৭-৮ টুকরো করা ( পরিষ্কার করে ধুয়ে ,নুন হলুদ মাখানো
সবুজ শিম - ২০০ - ২৫০ মতো ,কেটে কুটে জলে ভেজানো
কাঁচালঙ্কা - কয়েকটা চেরা ,কয়েকটা গোটা , ঝাল নিজের নিজের মতো
হলুদগুঁড়ো - ২-২.৫ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - প্রয়োজনমতো ,অল্প দিলে দারুনই হবে কিন্তু
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টো ,একটু করে ফাটানো ,ফোরণের জন্য
পাঁচফোড়ন - ১ চামচ ,ফোরণের জন্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - কয়েকদানা ,সুন্দর রং আর সুন্দর স্বাদের জন্য
তেল - প্রয়োজনমতো ,নিজের নিজের পছন্দ মতো তেলেই রান্না হবে ,কিন্তু সর্ষের তেলেই স্বাদ একটু বেশি তো হবেই
পদ্ধতি :-
খুব আনন্দের সঙ্গেই রান্না শুরু করলাম | এই স্পেশাল ঝোলটা কিন্তু বড়োই টেস্টি টেস্টি | গরম ভাতে গরম ঝোল.......রসনা এক দারুন তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেয় | স্বাদে তো তৃপ্তি আনেই ....মনও এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তোলে | মশলায় জমজমাট চটপটা স্বাদের খাবার তো ভালো লাগেই ,তবে চাপা দমবন্ধ গরমে হালকা টেস্টি টেস্টি রান্নাও দারুন আনন্দ এনে দেয় |
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল খুব ভালো মতো গরম হয়ে গেলে ,আঁচ কমিয়ে কয়েকটা নুন - হলুদ মাখানো মাছের টুকরো কড়াইতে তেলের মধ্যে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছের টুকরোগুলো কড়া করে ভেজে তুলে রাখলাম | বাকি মাছের টুকরো গুলো ও এই ভাবেই ভেজে ফেল্লাম |
মাছ ভাজা হয়ে যেতেই ,কড়াইতে পরে থাকা বাকি তেলের মধ্যে প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিলাম |আঁচ কমিয়ে তেলের মধ্যে দিলাম পাঁচফোড়ন ,২টো ফাটানো শুকনোলঙ্কা ,২টো চেরা কাঁচালঙ্কা আর জল ঝরানো গোটা গোটা শিমগুলো | দিয়ে দিলাম কয়েকটা চিনির দানা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে নাড়তে লাগলাম |
শিম ভাজার সুন্দর গন্ধ বার হতে শুরু করলেই ,দিয়ে দিলাম ১ চামচ মতো হলুদগুঁড়ো | আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে অল্পক্ষন ভালো করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | এবার আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম জিরেগুঁড়ো ,লঙ্কাগুঁড়ো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ নাড়তে নাড়তে দিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন | আঁচ বাড়িয়ে একটু নেড়ে নিয়ে ,ঝোলের পরিমান ভেবে কড়াইতে দিলাম জল |
ঝোল টগবগ করে ফুটে উঠতেই ,ঝোলের মধ্যে দিলাম কড়া করে ভেজে রাখা মাছের টুকরোগুলো | আঁচ কমিয়ে ঝোল কিছুক্ষন মজতে দিলাম | শিম নরম হয়ে এলে ,ঝোলের স্বাদ ও চেখে ফেললাম | সব এক্কেবারে ঠিকঠাক মনে হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | আহঃ ...কি সুন্দর এক মিষ্টি স্বাদের গন্ধ যেনো চারিদিকে ঘোরাফেরা করছে | সেই গন্ধে মনটাও যেনো ভেবেই চলেছে ........কখন খাবো ! কখন খাবো !!
যথারীতি মধ্যাহ্ন ভোজের টেবিলে স্বাদের বন্যা বয়ে গেলো সব্বাই ভীষণ ভীষণ খুশি তো হয়েইছে , সুন্দর স্বাদের তৃপ্তিতে ভরেও গেছে | কারো মুখে কোনো কথা নেই ,শুধু সব মুখগুলোই যেনো টেস্টি টেস্টি খাওয়ার তৃপ্তির আলোতে ঝলমল ঝলমল করছে | আর এসব দেখে আমার আনন্দের মাপকাঠি টা কোন জায়গায় পৌঁচেছে......তা বোধহয় আর বলে বোঝাতে হবে না .....কি বলেন ?
খুব ভালো থাকুন | খুশিতে ভরে থাকুন | আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন |
コメント