অ-আ-ই-ঈ..................আর ...ক-খ-গ-ঘ..................অক্ষর চেনা দিয়েই শুরু হলো আমার লেখাপড়া | অক্ষর চেনা শেষ হতেই শুরু করলাম প্রতিটি অক্ষর দিয়ে বাক্য গঠন করা ..........বাক্য গঠন ও শুরু হলো | অক্ষর মালা দিয়ে পর পর বাক্য গঠন করতে করতে 'ও ' অক্ষর দিয়ে প্রথম বাক্য শিখলাম ......''ওল খেওনা ধরবে গলা ''....চমকে গেলাম ,একটু ভয় ও পেলাম , 'ধরবে গলা '.... কে গলা ধরবে ? ....পরে বুঝলাম ,ওল খেলে নাকি গলা কুটকুট করে ,ব্যাথা ব্যাথা ও করে | কিন্তু মা তো ওলের নানা রকম পদ রান্না করে ....আমরাও খাই ....খুব ভালো লাগে ....কিন্তু কই ? ...গলা তো ধরেনা....ব্যাপারটা কি ?
পড়তে পড়তে আরোও একটা কথা শিখে ফেললাম '' যেমন বুনো ওল - তেমনি বাঘা তেঁতুল ''| ওলের রান্নায় তেঁতুল দিলে গলা কুটকুট ও করেনা আর ব্যাথাও করে না | ওলের মধ্যে এমন কিছু থাকে ,যেটা গলায় লাগলে ,গলা কুটকুট করে , ব্যাথা করে , গলা ফুলেও যায় | আবার টক টক তেঁতুলের মধ্যে এমন কিছু পদার্থ থাকে ,যা ওলের ওই কাঁটা কাঁটা অংশ গুলোকে গলিয়ে ফেলে , আর সেই জন্য গলায় কোনো কষ্ট ও হয় না, গলা ব্যাথাও করে না | জমিয়ে খাওয়া যায় সুস্বাদু ওলের মেনু |মায়ের রান্নার পদ্ধতিটাও কিছুটা বুঝেই ফেললাম | সত্যি!! .....সত্যিই !! ......মায়ের হাতের ......'ওলের বড়া ' ,'ওলের ডালনা ', ' সর্ষে বাটা দিয়ে ওল ভাতে মাখা '....আহা - হা - হা ......মনে হলেই জিভ জলে ভরে যায় .........
তবে একটা কথা ঠিক যে ....এখন বাজার থেকে কিনে আনা যে ওল আমাদের রান্নাঘরে এসে পৌঁছায় ....রান্নার পরে তাতে কখনই গলা ধরে না বা কোনোভাবে গলা কুটকুট ও করেনা | উপরন্তু ওল দিয়ে রান্না যে কোনো পদ ই স্বাদগুণে খুবই চটপটা হয় ,আর তাই তো জিভের স্বাদে এক নতুন মাত্রা ও এনে দেয় | তাছাড়া ওল নানা খাদ্যগুণেও সমৃদ্ধ | ওল পেট ভালো রাখে , রক্ত পরিশ্রুত করে ,নানা নানা ধরণের রোগব্যাধি দূরে রাখে | খুব খুব উপকারী | তাই অনেকটা ভালো থাকতে মাঝে মাঝে একটু ওল তো খাওয়া যেতেই পারে |
আজ আমার রান্নাঘরে বাজারের থলিতে খানিকটা ওল | আজ দুপুরের মেনুতে ওলের কোনো একটা পদ তো রাঁধবোই | কিন্তু কি রাঁধি .....? হঠাৎ মনে হলো ....এখন সবাই তো নানা ভাবে নানা রান্না সর্ষে - পোস্তোয় জমিয়ে মুখরোচক করে রাঁধছে .......আমিও যদি সর্ষে - পোস্তোয় চটপটা করে ওলের ঝাল রাঁধি ......তবে মনে হয় গরম ভাতে জমে যাবেই যাবে | বাঃ !...একটু নতুন ভাবে ওল রাঁধবো ভেবে বেশ,বে...শ ভালো লাগছে | সকালের কাজকর্ম গুলো শেষ করে ,নিশ্চিন্ত মনে দুপুরের রান্না শুরু করলাম |
একটা পাত্রে নিলাম আন্দাজমতো সর্ষে - পোস্ত গুঁড়ো | পাত্রে দিলাম অ.....ল্প কুসুম কুসুম গরমজল আর এক চিমটে নুন | এবার ওলের টুকরোটা , খোসা ছড়িয়ে নিয়ে ,ছোট ছোট ডুমো ডুমো করে কেটে ,জলে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে রাখলাম | জোগাড় করে রাখলাম কয়েকটা কাঁচালঙ্কা |
উপকরণ :-
ওল - ৫০০ গ্রাম , খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে ,জলে ধুয়ে নিয়ে জল ঝরানো
সর্ষে পোস্ত গুঁড়ো - ৩-৪ চামচ ,কুসুম কুসুম গরম অল্প জলে একটু নুন দিয়ে ভেজানো
কাঁচালঙ্কা - ৫-৬ টা বা নিজের নিজের পছন্দমতো
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২-৩ টি গোটা ,ফোরণের জন্য ,একটু করে ফাটানো ,রান্নায় স্বাদ গন্ধ সুন্দর করার জন্য
পাঁচফোড়ন - ১/২ - ১ চামচ ,ফোরণের জন্য আর অবশ্যই রান্নায় সুন্দর স্বাদ -সুন্দর গন্ধের জন্য
হলুদগুঁড়ো - ১/২ চামচ বা খুবই অল্প
লঙ্কাগুঁড়ো - খুবই অল্প ,রান্নায় সুন্দর রং আর চটপটা স্বাদ বাড়ানোর জন্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
তেল - সর্ষের তেল ,প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরু করে দিলাম | প্রথমেই মিক্সিতে অল্প অল্প ভেজা সর্ষে - পোস্ত আর ২-৩ টি কাঁচালঙ্কা নিয়ে মিহি করে একসঙ্গে বেটে নিলাম |এবার গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে গেলে দুটো ফাটানো শুকনো লঙ্কা দিয়ে দিলাম | একটু নেড়ে নিয়েই শুকনোলঙ্কাগুলো তুলে নিলাম | রান্না নামানোর আগে আবার রান্নায় দিয়ে দেবো | তেলে শুকনোলঙ্কা ভেজে নিলে ,তেলে ভাজা শুকনোলঙ্কার সুন্দর স্বাদ আর গন্ধ , রান্নাতেও এক সুন্দর স্বাদ আর গন্ধ তৈরি করে |
এবার কম আঁচেই কড়াইয়ের তেলে দিলাম পাঁচফোড়ন আর দুটো ফাটানো কাঁচালঙ্কা | দিলাম জলে ধোয়া ,ডুমো ডুমো কেটে রাখা ওলের টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে নেড়েনেড়ে ভালো করে সমস্ত ভাজতে লাগলাম | একটু ভাজা ভাজা হয়ে গেছে মনে হতেই ,আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম খুব অল্প পরিমানে হলুদ ,আন্দাজমতো নুন আর আন্দাজমতো চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আবার সব ভালো করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম |
সমস্ত উপকরণ সমেত কড়াইয়ের ওল বেশ মজে গেছে মনে হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিলাম ,মিক্সিতে মিহি করে বেটে রাখা সর্ষে - পোস্ত আর কাঁচালঙ্কা বাটা আর খুবই অল্প লালঙ্কারগুঁড়ো | আঁচ বাড়িয়ে সব উপকরণ হালকা হাতে একটু নেড়ে নিলাম | মিশ্রণ থেকে জল শুকিয়ে তেল পুঞ্চ পুঞ্চ করে বার হতে শুরু করতেই রসার পরিমান ভেবে কড়াইতে জল দিলাম | রসা ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে ,একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম |
সুন্দর এক গন্ধ !!! আহা...আহা ...গন্ধে মন ভরে যাচ্ছে | ঢাকা খুলে দেখে নিলাম ওলের টুকরো গুলো নরম হয়েছে কিনা , সঙ্গে সঙ্গে রান্নার স্বাদ ও চেখে নিলাম | বাঃ ! খুব সুন্দর ! আর বেশ টেস্টি টেস্টি | সব ঠিকঠাক হয়েছে মনে হতেই কড়াইতে দিয়ে দিলাম ভেজে রাখা শুকনোলঙ্কা দুটো আর আঁচ বাড়িয়ে রান্নায় রসার পরিমান ঠিক করে নিলাম | গ্যাস বন্ধ করে ,রান্না একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম | তৈরি করে ফেললাম সর্ষে - পোস্তোয় টেস্টি টেস্টি ওলের ঝাল | রান্নার গন্ধে চারিদিক ভরে আছে | এবার খুশি খুশি মনে রাঁধতে শুরু করলাম দুপুরের আর একটি মেনু ............
যথারীতি মধ্যাহ্ন ভোজের টেবিলে আমরা বাড়ির সব্বাই | শুরু হলো খাওয়া | সত্যি !! কি অপূর্ব লাগছে গরম গরম ভাত আর সঙ্গে সর্ষে - পোস্তোয় ওলের ঝাল | ওঃ ! কি সুন্দর টেস্টি টেস্টি | মনে হচ্ছে এটা দিয়েই আজ পুরো ভাত খেয়ে ফেলবো | দারুন ! দারুন লাগছে | খুব ভালো লাগছে | অপূর্ব স্বাদের আনন্দে আমরা সবাই আপ্লুতো | মনে হচ্ছে রান্নাটা আজ একটু বেশিই ভালো রেঁধে ফেলেছি !!!
আপনারাও সবাই মজা করে ভালো ভালো খান ,জমিয়ে খান | সুস্থ থাকুন ,ভালো থাকুন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |
Comments