থোড় - কলা গাছের কান্ড। থোড়ের পরিচিতি গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। থোড় দিয়ে নানা রকম পদ রান্না করা হয়। খেতেও খুব ভালো লাগে। ঔষুধি গুনে ভরপুর। রক্তাল্পতা কমাতে অর্থাৎ রক্তে হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বাড়াতে থোড়ের জুড়ি নেই। আমার তো মনে হয় ,প্রতিটি রান্নাঘরেই মাঝে মধ্যেই থোড়ের কোনো না কোনো মেনু অবশ্যই থাকা উচিত। অসাধারণ উপকারী সবজি। প্রত্যেক মানুষের কাছেই এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমি আমার রান্নাঘরে মাঝে মাঝে থোড়ের মেনু রাখি। সবচাইতে বড়ো কথা আমি থোড় খেতে খুব .....ই ভালোবাসি। বাড়ির সবাই ও ভালোবাসে।
আজ ও আমার বাজারের থলিতে থোড় আছে। এবার মাছের থলি খুলে দেখি ,রুই মাছ আর সঙ্গে একেবারে টাটকা খানিকটা কুঁচো চিংড়ি। ভাবছি ! আজ যদি থোড়ের নিরামিষ পদ না রেঁধে আমিষ পদ রাঁধি, তবে কেমন হবে ?........ভাবলাম থোড় - চিঙড়ি রাঁধবো ,মুখের স্বাদ একটু পাল্টাবে। আর কুঁচো চিংড়ির তো তুলনাই হয় না। যাতে দেব তাই হয়ে উঠবে অসাধারণ।
সকালে...... চা - জলখাবার খাইয়ে সবাইকে শান্ত করে থোড় - চিংড়ি রান্নায় মন দিলাম। কারণ কুঁচো চিংড়ি বাছতে বে ......শ খানিকটা সময় তো লাগবেই। ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে ঢুকে গেলাম.....।
উপকরণ :-
থোড় - ৩-৪ কাপ ( কুচানো )
কুঁচো চিংড়ি - ১৫০ গ্রাম
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭টি (অর্ধেক করে চেরা )
হলুদ- ১/৪ চামচ থেকে ১/২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্বতি :-
প্রথমেই থোড় জলে হালকা করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে একটা পাত্রে রাখলাম। তারপর সামান্য নুন ছিটিয়ে থোড় বেশ খানিক্ষন হাত দিয়ে চেপে চেপে মেখে রেখে দিলাম। এবার কুঁচো চিংড়ি গুলো পরিষ্কার করে ছাড়িয়ে নিয়ে ,জল দিয়ে বার বার ধুয়ে নিলাম,আর নুন হলুদ মাখিয়ে রাখলাম।
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হলে ৪-৫টি অর্ধেক কাঁচালঙ্কা আর নুন হলুদ মাখানো চিংড়ি মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে ,আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে নিলাম। দেখলাম নুন মাখানো চটকানো থোড় থেকে কিছুটা জল বেরিয়েছে। জল চিপে নিয়ে সমস্ত থোড় কড়াইতে দিয়ে দিলাম। দিলাম এক চিমটে হলুদ ,নুন আর চিনি। আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ কয়েকবার নাড়াচাড়া করে নিয়ে আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম।
কিছুক্ষন পর ঢাকা খুলে দেখি ,থোড় থেকে জল বেরিয়েই থোড় সেদ্ব হচ্ছে। ঢাকা খুলতেই থোড় আর চিংড়ির মিষ্টি একটা গন্ধে জায়গাটা ভরে গেলো। বেশ ভালো লাগলো। আবারো কম আঁচেই ঢাকা দিয়ে রান্নাটা পুরো পুরি হতে দিলাম। থোড় সেদ্ব হয়ে গেছে মনে হতেই ,ঢাকা খুলে আঁচ বাড়িয়ে,বাকি অর্ধেক কাঁচালংকাগুলো কড়াইতে দিয়ে থোড় - চিংড়ির জল শুকিয়ে নিলাম।
চিংড়ি আর থোড় মাখো মাখো হয়ে গিয়েছে। এবার রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। ওমা ! কি দারুন হয়েছে !!!দারুন স্বাদ ! মন আনন্দে ভরে গেলো। এখন খাবার টেবিলে সবার ভালো লাগলেই মন আরো ভরে উঠবে।
দুপুরে খাবার টেবিলে সবারi প্রথম পাতে দিলাম গরম গরম ভাতের সঙ্গে থোড় - চিংড়ি। খাবার মুখে দিতেই সব্বাই একসঙ্গে বলে উঠলো ,কি রেঁধেছ গো !!! অপূর্ব !!!অপূর্ব !!! একজন তো বলেই দিলো আজ শুধু এটা দিয়েই ভাত খাবো। সুন্দর স্বাদে মুখ ভরে গেলো ,এরপর আর অন্য রান্না খাবো না।খেতে বসে আমি ও ভাবলাম ,আজ আমি শুধু থোড় - চিঙড়ি দিয়েই ভাত খাবো। নিজের রান্না খেয়ে আমি মনে মনে নিজেই নিজের প্রসংশা করে ফেললাম।
আপনাদের ও বলছি ,একবার রান্না করে খেয়ে দেখুন ,খুউব ভালো লাগবে। তবে থোড় কিন্তু কচি হতে হবে আর কুঁচো চিংড়ি না পেলে ,বড়ো চিংড়ি ভালো করে ছাড়িয়ে নিয়ে ,ছোট ছোট টুকরো করেও থোড় - চিংড়ি রান্না করা যাবে।
খুউব ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকুন।
Kommentare