top of page

খোকাইলিশ - কাঁচকলার - সর্ষে - ঝোল (Khoka Illisher Kachkolar Jhol)

ree

বর্ষা কে টা টা করে শরৎ বাংলার বুকে পা রেখেছে | আমাদের '' মা '' আসবেন যে !! আমাদের সবার মা , সবার আদরের জগজ্জননী ,সবার শক্তি , মহামায়া দূর্গা | শরৎ কালেই তো তেনার ছেলেপুলে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসা | আর বছর বাদে , সেই আগমনেই তো চারিদিকে শুরু হয় মহৌৎসব | সবার অন্তরের আনন্দের উৎসব |


কিন্তু বর্ষা কে টা টা করলেও তো সে কোনো কথাই শোনে না | শরতের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে সমানে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেই চলেছে | আর ফল স্বৰূপ , বর্ষা ভেজা শরৎকাল | জল থৈ থৈ মাঠঘাট , জল থৈ থৈ রাস্তাঘাট | বর্ষা কে সঙ্গী করেই , শরতে মায়ের পূজা , মায়ের পূজা - প্যান্ডেল , আর পুজোর উৎসব | শরতের উৎসবে চারিদিকে বর্ষার ছোঁওয়া |


ree

শরতের বাজারে , বর্ষার নানা শাক - সবজি , মাছ - মোছলি, বাজার জমিয়ে রয়েছে | আর তাইতো বর্ষার রানী ইলিশের রাজ্ তো বাজারে দেখাই যাচ্ছে | ছোট - বড়ো নানা ধরণের ইলিশ | তবে আমার বাড়িতে আজ কোনো বড়ো- সরো ডিমভরা ইলিশ মাছ নয় , আজ আমার বাড়িতে ছোট ছোট ৩টে খোকা ইলিশ | মনে মনে ভাবছিলাম , এই খোকা ইলিশের হালকা পাতলা ঝোল গরম ভাতের সঙ্গে অসাধারণ লাগে | সুন্দর ঝোলের টেস্টি টেস্টি স্বাদে মন - প্রাণ তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেয় |

ree

বাঃ বাঃ , ভাবনা তো বেশ ভালোই | বৃষ্টির তো বিরাম নেই | ঝির ঝির পরেই চলেছে | বাইরে বৃষ্টি ভেজা দিন আর ঘরে গরম ভাতে গরম গরম ইলিশের হালকা ঝোল , দারুন দারুন জমে যাবে !! ....কিন্তু , কিন্তু ঝোল তো রাঁধবো , তবে কি দিয়ে রাঁধলে বেশ ভালো হবে ?? ভাবতে ভাবতে , মনে পড়লো কাল পাশের বাড়ির পুঁটির মা , কয়েকটা গাছের কাঁচকলা দিয়ে গিয়ে ছিল | কাঁচকলা আর অল্প সর্ষে বাটা দিয়ে খোকা ইলিশের হালকা - পাতলা ঝোল টাও কিন্তু দারুন টেস্টি টেস্টি হয় | তাহলে এটাই ঠিক করলাম , আজ রাঁধবো ....''.খোকাইলিশ - কাঁচকলার - সর্ষে - ঝোল '' (Khoka Illisher Kachkolar Jhol) |


ree

মাছগুলো কেটেকুটে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে , নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | কাঁচকলা কটা ও ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে , প্রত্যেকটা ৪ টুকরো করে কেটে নিয়ে , হলুদ জলে ভিজিয়ে রাখলাম |


সকালের জল - খাবারের পাট চুকিয়ে , সব কাজ কর্ম সেরে , দুপুরের জন্য রাঁধবো , খোকাইলিশ - কাঁচকলার - সর্ষে - ঝোল | ২ চামচ সাদা সর্ষেও , এক চিমটে নুন দিয়ে খুব কুসুম কুসুম গরম জলে , ভিজিয়ে দিলাম |

মাছের টুকরোগুলো ও ভালো করে ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রেখেছি | আমার সব গুছানো , এখন বাকি শুধু রান্না শুরু করা |



উপকরণ :

ree
  • খোকা ইলিশ - ৩টে , প্রত্যেকটা ৩ টুকরো করে কেটে , ধুয়ে পরিষ্কার করে নুন - হলুদ মাখানো

  • কাঁচকলা - ৪টে , প্রত্যেকটা , খোসা ছাড়িয়ে , ৪টুকরো করে কেটে , হলুদ জলে ভেজানো

  • সাদা সর্ষে - কুসুম কুসুম গরম জলে ভিজিয়ে রাখা

  • কাঁচালঙ্কা - ৬-৭টা , ২টো ফোরণে , বাকিটা বাটা

  • হলুদগুঁড়ো - ২-৩ চামচ

  • লাল লঙ্কারগুঁড়ো - ১-২ চামচ , ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো

  • পাঁচফোড়ন - ১ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি দানা - ২-৩টে , রান্নায় রং ধরাতে , আর রান্নায় চমক আনতেও , এটা আমার মনে হওয়া, ইচ্ছে না হলে , না ...না ........একদম ই না

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো



পদ্ধতি :-


সকালের সব কাজকর্ম সেরে ফেলেছি | আর রান্নাঘরে ও চলে এসেছি | এবার শুধু রাঁধবো গরম ভাত আর গরম গরম '' খোকাইলিশ - কাঁচকলার - সর্ষে - ঝোল '' | আজকের দুপুরে শুধুই এই মেনু | রান্না শুরু করেই ফেলি | দিন তো এগিয়েই চলছে | জলদি জলদি কাজ সেরে ফেলাই ভালো |


ree

আজ প্রথমে বেটে নেবো , ভেজানো সর্ষে | মিক্সি আছে , কিন্তু মিক্সিতে বাটবো না | বাটবো শিল - নোড়াতে | মা তো সব সময়েই বলতো , শিল - নোড়ায় বাটা মশলার স্বাদই আলাদা হয় , স্বাদে - গুনে স্পেশাল হয় | মায়ের কথা মনে পড়তেই , ভেবে ফেললাম , আজ আমি শিল - নোড়ায় বাটা সর্ষে দিয়েই , আজকের রান্না সার .... বো | পেতে নিলাম শিল | শিল পাটায় তুলে নিলাম জল ঝরানো সর্ষে আর ৫টা কাঁচালঙ্কা | শিল - নোড়ায় বেটে ফেললাম মিহি করে সর্ষে - কাঁচালঙ্কা |


ree

এবার গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিলাম প্রয়োজন মতো তেল | তেল খুব ভালোভাবে গরম হলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম , জল ঝরানো কাঁচকলার টুকরোগুলো | দিলাম এক চিমটে নুন , এক চিমটে হলুগুঁড়ো আর কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মুচমুচে করে , কাঁচকলার টুকরোগুলো ভেজে তুলে নিলাম |



ree

এবার ওই তেলের মধ্যেই আঁচ কমিয়ে দিলাম , ১ চামচ পাঁচফোড়ন আর ২টো ফাটানো কাঁচালঙ্কা | তেলের মধ্যে একে একে বসিয়ে দিলাম , নুন - হলুদ মাখানো , খোকা ইলিশের পিস্ গুলো |আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছের টুকরোগুলো এপিঠ ওপিঠ করে একটু ভেজে নিলাম | মাছের পিসগুলোতে হালকা রং ধরতেই , আঁচ বাড়িয়ে ভাজা মাছগুলোর মধ্যে কাঁচালঙ্কা - সর্ষে বাটা টা দিয়ে দিলাম | আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ের মধ্যে দিলাম , ১ চামচ হলুদগুঁড়ো আর ২ চামচ মতো লাল লংকার গুঁড়ো | দু - এক দানা চিনি আর প্রয়োজনমতো নুন |



ree

আঁচ বাড়িয়ে হালকা হাতে সবকিছু , কয়েকবার নেড়ে নিলাম | আঁচ কমিয়ে দিলাম | সর্ষে বাটা থেকে জল শুকিয়ে , পুচ পুচ করে তেল ছাড়তে শুরু করতেই , আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ঝোলের পরিমান ভেবে , প্রয়োজন মতো জল | সর্ষে ঝোল টগবগ টগবগ করে ফুটতে শুরু করতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম , ভেজে রাখা কাঁচকলার টুকরোগুলো |


আঁচ বাড়িয়ে দু - এক বার ফুটিয়ে নিয়ে , আঁচ কমিয়ে রান্না মজতে দিলাম | ইলিশ , কাঁচকলা ,সর্ষে মজতে লাগলো | ছেড়ে দিলাম কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা | রান্নায় টেস্টে আর গন্ধে নতুন মাত্রা এনে দেবে | তবে আমি অবাক হয়ে গেলাম , ইলিশ মাছের ঝোলের অপূর্ব গন্ধে !! চারিদিক টা মো মো করছে | এই ছোট্ট ছোট্ট মাছগুলোতে এত্ত সুন্দর মন মাতানো গন্ধ !!


আমি অবাক তো হয়ে ই ছি আর খুবখুব খুশিতে ভরে ও গেছি | তবে একটা কথা তো ঠিক যে , এখনকার এই মাছগুলো খেতে যে কি ভালো , রান্নাকে কতটা মধুর আর লোভনীয় টেস্টে ভরে দেয় , সেটা আমরা যারা এই মাছ রেঁধে পাতে রাখি , তারা প্রত্যেকেই জানতে পারি , বুঝতে পারি আর অনুভব করতে পারি (Khoka Illisher Kachkolar Jhol)| প্লিজ আপনারাও একবার অনুভব করুন না !! ভালো লাগবে ! দেখবেন খুব খুব ভালো লাগবে !!


যাহোক মনে তো হচ্ছে রান্না হয়ে এসেছে | রান্না একটু চেখে নিলাম | কি অপূর্বই না লাগছে !! জমে যাবে ! আজকের আমাদের খাবার টেবিল জমে যাবেই আর এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ই পারি | ঝোল হয়ে গেছে দেখে , আঁচ বাড়িয়ে সর্ষে ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে , গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | তৈরি জিভে জল আনা মনমাতানো গন্ধ ভরা , আজকের মেনু '' খোকাইলিশ - কাঁচকলার - সর্ষে - ঝোল '' | আজ আমাদের খাবার টেবিল তৃপ্তিতে ভরা | স্বাদের আনন্দে সবাই মাতোয়ারা | খুশি খুশি আর খুশি | অনেকটা খুশি ......অনেক...........টা খুশি .......


খুশিতে থাকুন | ভালো খান | ভালো থাকুন | সুস্থ থাকুন |

Comments


bottom of page