top of page
Writer's pictureKaveri Nandi

উচ্ছে - শুক্ত



বর্ষাকালে এই ভ্যাপসা গরমে প্রাণ একেবারে হাপিয়ে উঠেছে | ঘরে বাইরের কোনো কাজেই যেন ঠিক আনন্দ নেই | খুবই অসহ্য গরম | খাবার ইচ্ছে টাও যেন অনেকটাই কমে গেছে | ভাবছি এমন কিছু একটা রান্না করবো যেটা শরীরের পক্ষেও ভালো আর জিভেও আনবে স্বাদ |


সকালে বাজারের থলিতে রুই মাছের পিস্ গুলো দেখেই ভেবেছি আমিষে রাখবো রুই পোস্ত | তবে নিরামিষ পদটি কি রাঁধবো ? ভাবতে ভাবতেই সবজির থলি থেকে বার করলাম --- উচ্ছে, বেগুন, পটল, মুলো |


মনে পরে গেলো ছোট বেলার সেই কবিতা..........কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি.........উচ্ছে, বেগুন, পটল, মুলো, বেতের বোনা, ধামা কুলো...........


মনে মনেই হাসতে লাগলাম | ভাবলাম এই ভ্যাপসা গরমে সবজি গুলো দিয়ে শুক্ত রাঁধলে কেমন হয় ?


শুক্ত বড়ই উপকারী পদ | বাঙালির বিভিন্ন পদের এক স্পেশাল পদ | বহু বহুকাল আগে বনেদি বাঙালি পরিবারের প্রায় প্রতিদিনের মেনু ছিল এক এক ধরণের শুক্ত | শুক্তোর সুন্দর গন্ধে আর স্বাদে যেন পাতের অর্ধেক ভাতই শেষ হয়ে যায় |


এই সব ভাবতে ভাবতে শুক্ত রাঁধার জন্য তৈরী হতে লাগলাম..............


উপকরণ :-


  • বড় উচ্ছে - ২০০ গ্রাম (লম্বা লম্বি সরু সরু করে কাটা)

  • মুলো (মাঝারি সিআইজের) - ২টি (আড়াআড়ি ভাবে কেটে ডুমো ডুমো করা)

  • বেগুন (ছোট সাইজের) - ৩টি (প্রতিটি লম্বা লম্বি ৪ টুকরো করা)

  • কচি পটল - ২৫০ গ্রাম (খোসা ছাড়িয়ে আড়াআড়ি লম্বা করে কাটা)

  • আলু - ৩,৪টি মাঝারি সাইজের (খোসা ছাড়িয়ে লম্বা লম্বি ৪ টুকরো করে কাটা)

  • আদা বাটা - ৩ থেকে ৪ চামচ

  • গোটা জিরে - ১ চামচ

  • রাঁধুনি - ১ চামচ

  • সর্ষে - ১ চামচ

  • পোস্ত - ১ চামচ

  • বড়ি - ১৪,১৫টি

  • নূন - প্রয়োজন মতো

  • চিনি - প্রয়োজন মতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজন মতো

  • ঘি - ২ চামচ


পদ্ধতি :-


প্রথমে কিছুটা সর্ষে আর পোস্ত জলে ভিজিয়ে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই গরম করে কড়াইতে দিলাম ১/২ চামচ সর্ষে, ১/২ চামচ পোস্ত, ১/২ চামচ রাঁধুনি, ১/২ চামচ গোটা জিরে | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে খালি কড়াইতে সমস্ত উপকরণ মুচমুচে করে নেড়ে নিলাম | এই উপকরণ মিক্সিতে দিয়ে মিহি করে গুঁড়ো করে রাখলাম | আর ভিজে পোস্ত, ভিজে সর্ষে জল থেকে তুলে মিক্সিতে নিয়ে মিহি করে বেটে রাখলাম|


এবার কড়াইতে তেল দিলাম | তেল গরম হলে, বড়ি গুলো রাঙা করে ভেজে তুলে রাখলাম | জলে ধোয়া বেগুন গুলো ভেজে নিয়ে তুলে রাখলাম | এবার প্রয়োজন মতো তেল দিয়ে, ফোড়নে দিলাম ১/২ চামচ গোটা জিরে, ১/২ চামচ রাঁধুনি | দিলাম জলে ধোয়া আলুর টুকরো গুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে ভাজতে লাগলাম |


আলু গুলো হালকা রাঙা রাঙা হলে, দিলাম জলে ধোয়া মুলোর টুকরো গুলো | আবারো ভালো করে আঁচ কমিয়ে বাড়িয়ে ভাজতে লাগলাম | দিলাম আদা বাটা | দু একবার নাড়াচাড়া করে নিয়ে, দিলাম নূন, চিনি আর পটোলের টুকরো গুলো |


এবার সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে অনেক্ষন ধরে আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কষতে লাগলাম | সমস্ত উপকরণ ভাজা ভাজা মনে হলে, শুক্তোর রসা ভেবে নিয়ে জল দিলাম | শুক্তোর ঝোল টগবগ করে ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম |


কিছুক্ষন বাদের আলু, মুলো সেদ্ধ হয়ে গেলে, দিলাম ভাজা বড়ি গুলো আর বেগুনের টুকরো | আবারো আঁচ কমিয়ে কিছুণ হতে দিলাম | এবার রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কড়কড়ে করে ভাজা উচ্ছে গুলো শুক্তোর মধ্যে দিয়ে দিলাম আর ঝোলের পরিমাণ ঠিক করে নিলাম |


দিলাম সর্ষে পোস্ত বাটা | একটু নাড়াচাড়া করে শুক্তোয়ে রসার পরিমাণ ঠিকঠাক মনে হলে গুঁড়ো করা ভাজা মশলা গুলো শুক্তোর কড়াইতে ছড়িয়ে দিলাম; দিলাম ২ চামচ ঘি | একটু নাড়াচাড়া করে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম আর ঢাকা দিয়ে রান্নাটা রেখে দিলাম |


দুপুরে খাবার পাতে সুক্তের সুন্দর গন্ধেই মনে হলো যেন অর্ধেক খাওয়া হয়ে গেছে | খাবার শুরুটা সুন্দর স্বাদের শুক্ত দিয়ে বড়ই ভালো হলো | তারপরেই খেলাম রুই পোস্ত | খাবার টেবিল জমে গেলো | সবাই বললো একেবারে পারফেক্ট মেনু |


সবাই আনন্দ করে খান, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন |



99 views0 comments

Comments


bottom of page