চিতল - মাছের - বড়ার - ঝোল (Chitol Macher Borar Jhol)
- Kaveri Nandi

- Aug 7
- 5 min read

হঠাৎ আজ আমরা চলে এসেছি আমাদের দেশের বাড়িতে | প্রয়োজন হয়েছে বলেই , আমাদের আসতে হয়েছে | তবে , এই বৃষ্টি ভেজা ওয়েদারে মনে হচ্ছে না আসতে হলেই বোধহয় ভালো হতো | চারিদিক জল থৈ থৈ | অনবরত বৃষ্টি ....পরেই চলেছে .....পরেই চলছে ....| কখনো মুষলধারে , তো কখনো ঝিরঝির ঝিরঝির | বাস থেকে নেমে , বাড়ির দিকে এগোতেই , আবার শুরু হয়ে গেলো ঝমঝমাঝম বৃষ্টি | ওহো হো হো ...ভিজে তো আমরা একসা হয়ে গেলাম | যাহোক কোনো মতে আমরা বাড়িতে পৌঁছে গেলাম |

আজ খুব ভোরে বেরিয়ে এসেছি | তাই ৩-৪ ঘন্টায় , দেশের বাড়িতেও পৌঁছে গেছি | কিন্তু দরজা - জানলা সব বন্ধ ছিল | তাই বাড়ির ভেতরে ঢুকে , পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে নিতে ও কিছুটা সময় তো লাগলোই | গিয়েছি আমরা ৬ জন | হাতে হাতে সব কাজ , তাড়াতাড়ি ই হয়ে গেলো | বাড়ি এখন কিছুক্ষনের মধ্যেই চকচকাচক |
জল খাবার তৈরি করার আর সময় পাইনি | সবাইয়ের বেশ ক্ষিধে ও পেয়ে গেছে | তাই কেউ একজন তাড়াতাড়ি বাজার থেকে এনে ফেললো , গরম গরম কচুরি আর গরম গরম ঘুগনি | সবাই মিলে খুব মজা করে , আনন্দ করতে করতে জলখাবার সেরে নিলাম | পেট ঠান্ডা ...তো মাথা ঠান্ডা , আর মাথা ঠান্ডা ....তো মন ও ঠান্ডা ...

মন ঠান্ডা অতএব , এবার তো লাঞ্চের মেনু তৈরির কথা ভাবতেই হচ্ছে | কারণ বৃষ্টি থেমেছে আর দুপুরের রান্নার উপকরণ ও পৌঁছে গেছে আমার রান্নাঘরে | আমি তো একেবারে অবাক !! কখন প্ল্যান হলো ? আর কখনোই বা বাজার ও এসে গেলো ?? ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম , আমি ছাড়া , বাকি সবাই আজ ভেবে ই নিয়েছে , আমার হাতের রান্না , চিতল মাছের কিমার বড়ার গরম গরম ঝোল ....দিয়ে গরম গরম ভাত , এই বৃষ্টির দিনে , সব্বাই মিলে জমিয়ে জমিয়ে খাবে |

বাজারের থলি খুলে দেখি , আলু , পেঁয়াজ , টমেটো , আদা , রসুন ,কাঁচালঙ্কা তো রয়েইছে , সঙ্গে রয়েছে চিতল মাছের খানিকটা কিমা | দেখেই তো বুঝতে পারছি খুবই টাটকা | আর এখানে , খুব খুব ভালো করে চিতল মাছের কিমা তৈরি করে দেয় | সবাই জানাশোনা | অনেকদিন পরে আমরা এলে সবাই বেশ খুশি খুশি হয় | সবার ব্যবহার ও খুবই ভালো |

যাহোক আসল কথা হলো , এবার আমাকে রান্না শুরু করে দিতে হবে | দুপুরে সবাই খাবো তো !! '' চিতল - মাছের - বড়ার - ঝোল ''
....সত্যি ই , দারুন এক মেনু | যারা মাছ খেতে ভালো বাসেন , তারা সব্বাই জানেন , চিতল মাছ ...কি স্পেশাল স্বাদের এক মাছ | স্বাদে গুনে অসাধারণ | চিতল মাছকে আমরা নানা ভাবে রাঁধি | আর ভাতের পাতে প্রতিটি মেনুই হয়ে ওঠে অসাধারণ | এই বিষয়ে আপনারা সবাই মনে হয় , আমার সঙ্গে একমত হবেনই হবেন |

কিন্তু , আমি , কিন্তুতে পরে গেলাম | রাঁধবো তো বটে , কিন্তু না আছে শিল - নোড়া , না আছে মিক্সি | তাড়াতাড়ি তে মিক্সিটা ও আনতে ভুলে গেছি | আদা , রসুন তো একটু বেটে নিলেই ভালো হয় | কিন্তু বাটবো কেমন করে ? কি করি , কি করি ,,,ভাবতে ভাবতে মনে হলো ...আদা - রসুন তো মিহি করে কুঁচিয়েও রান্না করতে পারি | মনে তো হয় , ভালোই হবে (Chitol Macher Borar Jhol) |

কারণ , রান্নাটা আমায় করতেই হবে | আমার কাছে , আমার বাড়ির সবার ইচ্ছে মানেই আমার ...ইচ্ছা | আলু , পেঁয়াজ , টমেটো কেটে নিলাম | আদা রসুন ও মিহি করে কুঁচিয়েই নিলাম .....কয়েকটা কাঁচালংকাও কুচিয়ে রাখলাম ....
উপকরণ :-

চিতল মাছের কিমা - ৩০০ - ৩৫০ গ্রা
আলু - ৬-৭টি , মাঝারি সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে , লম্বালম্বি ২ টুকরো করে কেটে জলে ভিজিয়ে দিলাম
পেঁয়াজ - ৩টে ছোট সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচিয়ে রাখলাম
টমেটো - ১টা ছোট সাইজের, কুচিয়ে রাখলাম
আদা - ইঞ্চি দেড়েক , খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচিয়ে রাখলাম
রসুন - ১৩ - ১৪ কোয়া , ছাড়িয়ে নিয়ে মিহি করে কুচানো

কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টা , কুচিয়ে রাখলাম
তেজপাতা - ৪-৫টা , ছোট ছোট সাইজের
গোটা জিরে - ১ চামচ
ছোট এলাচ - ৫টি একটু করে ফাটিয়ে রাখলাম
লবঙ্গ - ৫-৬টা
দারচিনি - ৫-৬ টুকরো
হলুদগুঁড়ো - ১-২ চামচ
জিরেগুঁড়ো - ৩-৪ চামচ
লাল লঙ্কারগুঁড়ো - ৪-৫ চামচ
গরম মশলার গুঁড়ো - অল্প , স্বাদের চটক বাড়াতে , ১/২ চামচ
ঘি - ১ চা চামচ

নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরু করছি | প্রথমে চিতল মাছের কিমা একটা পাত্রের মধ্যে নিয়ে , হালকা ভাবে ধুয়ে নিলাম | এবার পাত্রের মধ্যে দিলাম কুচানো রসুনের অর্ধেকটা , কুচানো আদার অর্ধেকটা , কুচানো কাঁচালঙ্কা পুরোটা , ১/২ চামচ মতো লাল - লঙ্কারগুঁড়ো , প্রয়োজনমতো অল্প নুন আর প্রয়োজনমতো অল্প চিনি | হাত দিয়ে ভালো করে পাত্রের সব উপকরণ মিশিয়ে নিলাম | এবার মাখা মিশ্রণ বলের আকারে আকারে গড়ে রাখলাম |

গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো অল্প জল দিলাম | জল ভালো মতো গরম হয়ে উঠলে , গড়ে রাখা চিতল কিমার বলগুলো কড়াইয়ের গরম জলের মধ্যে একটা একটা করে ছেড়ে দিলাম | কড়াইয়ের গরম জলের মধ্যে বলগুলো হালকা ভাপিয়ে নিলাম | কড়াইয়ের জল কিন্তু ফুটবে না | শুধু মাত্র ভালোমতো গরম হবে | গরম জলের মধ্যে বলগুলো কিছুক্ষন রেখে , জল ছেঁকে তুলে রাখলাম |

এখন কড়াই পরিষ্কার করে , খানিকটা সর্ষের তেল কড়াইতে ঢেলে দিলাম | তেল ভালো মতো গরম হয়ে উঠলে , আঁচ কমিয়ে হালকা ভাপানো চিতল মাছের কিমার বলগুলো , একে একে কড়াইতে দিয়ে , খুব হালকা করেই , অল্প ভেজে তুলে নিলাম | এইবার ওই তেলের মধ্যেই .......কেটে রাখা আলুগুলো জল ঝরিয়ে তুলে নিয়ে , কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | দিলাম এক চিমটে নুন আর এক চিমটে চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলুর টুকরোগুলো , হালকা রাঙা করে ভেজে নিয়ে , কড়াই থেকে তুলে রাখলাম |

এবার কড়াইয়ের ওই তেলের মধ্যেই প্রয়োজন বুঝে অল্প তেল দিলাম | তেল গরম হলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ের তেলের মধ্যে ছেড়ে দিলাম , ১ চামচ গোটাজীরে , ৪-৫টা তেজপাতা , ৫টা ফাটানো ছোটএলাচ , ৫-৬টা লবঙ্গের টুকরো আর দিলাম ৫টুকরো দারচিনি | খুন্তি দিয়ে অল্প নাড়া চাড়া | মন ভালো করা ফোরণের সু - গন্ধ ! আহা আহা ! কড়াইতে দিয়ে দিলাম পেঁয়াজকুচি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে শুরু হলো আমার নাড়াচাড়া | আমি খুন্তি নেড়ে চলেছি ....আর ভাজা উপকরণের গন্ধ ও ভেসে ভেসে চলেছে (Chitol Macher Borar Jhol) |

পেঁয়াজ কুচি তে হালকা বাদামি রং দেখা দিলেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম আদা আর রসুন কুচিগুলো | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়াচাড়ার কাজ | দিয়ে দিলাম ভেজে রাখা আলুর টুকরো গুলো আর টুকরো টুকরো টমেটোকুচি গুলো | আঁচ বাড়িয়ে শুরু হলো , একমনে নাড়াচাড়া | আঁচ কমিয়ে দিলাম হলুদগুঁড়ো | ২-১ বার নেড়ে নিয়ে , কড়াইতে দিলাম জিরেগুঁড়ো আর লাল লঙ্কারগুঁড়ো ,নুন আর অল্প চিনি | আঁচ বাড়িয়ে - কমিয়ে চললো , সমস্ত উপকরণের নাড়াচাড়া আর নাড়াচাড়া | কষা হতে হতেই , স্বাদ বাড়াতে ...স্বাদে চমক আনতে , কড়াইয়ের মধ্যে দিলাম ..১ চামচ ঘি |

নাড়াচাড়া করছি আর ...ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দারুন সু ..গন্ধ !! ভী......ষণ ভালো লাগছে | মনে তো হচ্ছে কষা হয়ে গেছে | আঁচ বাড়িয়ে , রান্নায় ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে দিয়ে দিলাম কুসুম গরম গরম জল | ঝোল ভালোভাবে ফুটতে শুরু করতেই , কড়াইতে একে একে ছেড়ে দিলাম , ভেজে রাখা চিতল - কিমার - টেস্টি টেস্টি - বড়াগুলো | ঝোল ২-১ বার ভালোভাবে ফুটে গেলে , আঁচ কমিয়ে রান্না কিছুক্ষন মজতে দিলাম | কিছুক্ষনের মনে হলো রান্না হয়েই এসেছে | একটু চেখে ও নিলাম | অসা.......ধারণ স্বাদের হয়েছে যে !! আঁচ বাড়িয়ে রান্নায় দিয়ে দিলাম খুব অল্প , ১.২ চা - চামচ গরম মশলার গুঁড়ো |

বেশি আঁচে একটু ফুটিয়ে জলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম | চারিদিকে এক অপূর্ব , অ....পূর্ব মনকাড়া গন্ধ !! আজকে এই রকম অবস্থায় , এতো লোভনীয় গন্ধে , তৈরি আমার এক প্রিয় রান্না ....'' চিতল - মাছের - বড়ার - ঝোল '' (Chitol Macher Borar Jhol) | আমার মন আনন্দে ভরপুর | বুঝতে পারছি আজকের দুপুর আমাদের ভালোই কাটবে |
সত্যিই দুপুরটা , খাবার টেবিলে আমাদের সবাইয়ের , খাওয়ার আনন্দে , মুখরোচক স্বাদের আনন্দে , কি ভীষণ রকম ভালোতে মাখামাখি হয়ে গেলো , তা মনেহয় ভাষায় বোঝানো যাবে না | গরম গরম ভাত আর গরম গরম '' চিতল - মাছের - বড়ার - ঝোল ''..........স্বাদে - তৃপ্তিতে - খুশিতে আমরা ভরপুর !!
ভালো ভালো খান | আর খুব ভালো থাকুন | আনোন্দে থাকুন | অনেক অনেক সুস্থতায় ভ.....রে থাকুন |
.jpg)



Comments